কোভিডকালে নারীর সমতার জন্য নিবিড় যত্ন চাই

নারীর সমতা ও দারিদ্র্যের ওপর করোনাকালের প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারপারসন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান। কোভিড-১৯ ও দারিদ্র্য বিষয়ে তাঁর গবেষণাকাজের মধ্যে রয়েছে পিপিআরসি এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) তিন পর্বের ধারাবাহিক বড় জরিপ। ২২ মার্চ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কুর্‌রাতুল-আইন-তাহ্‌মিনা।

হোসেন জিল্লুর রহমান

প্রশ্ন :

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ গভীরতর হচ্ছে। এতে নারী এবং নারীর সমতার জন্য কী সংকট দেখছেন?

হোসেন জিল্লুর রহমান: বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর কোভিড অতিমারির প্রভাব নিয়ে গত মাসে শেষ হওয়া পিপিআরসি-বিআইজিডি জরিপের তৃতীয় পর্বে বিষয়টি এসেছে। আশা করছি, চলতি মাসে প্রাথমিক ফলাফল বেরোবে। ইতিমধ্যে লকডাউন পরিস্থিতির দ্বিতীয় ঢেউ সব রকম সংকটই বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শিক্ষা খাতের ক্ষতি ছাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে গভীর হতে পারে। টানা স্কুল বন্ধ এবং ডিজিটাল সুযোগের ব্যাপক বৈষম্যর ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী হয়তো ইতিমধ্যেই ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়ার পরিসংখ্যান বলতে পারবে, মেয়েরা কতটা বিষম অনুপাতে এর ভুক্তভোগী হচ্ছে।
আলামত এখনই দেখতে পাচ্ছি। বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। এটা কোভিডের একটা সরাসরি কুফল। এ ছাড়া, শেখার ক্ষতিটা অপূরণীয় হতে পারে।

প্রশ্ন :

স্বাস্থ্য খাতে সংকটের প্রভাব কেমন হবে, যেমন ধরুন পরিবার পরিকল্পনা সেবার বিষয়টি?

হোসেন জিল্লুর: দেশে এ যাবৎ কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। আর গত বছর মোট মৃত্যু ২০১৯ সালের চেয়ে সংখ্যায় ৩১ হাজার বেশি ছিল। বাড়তি মৃত্যুর বড় কারণ অসংক্রামক ব্যাধি। স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক সংকট কিছু অংশে হলেও দায়ী।
নারীর প্রজনন ও মাতৃত্বকালীন সেবা বড় ক্ষতি গুনছে। সরকার কোনো ঘোষণা দেয়নি, কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের জন্য একটি নীতিপত্র তৈরি করতে গিয়ে পিপিআরসি দেখেছে, গত বছর ‘লকডাউন’-এর সময় পরিবার পরিকল্পনা সেবা অনেকাংশে ভেঙে পড়েছিল। শুধু বেসরকারি নয়, সরকারি সেবাও।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে মেয়েদের বঞ্চনা বাড়বে।

  • নারীরা বেশি কাজ করেন সেবা খাতে। খাতটি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে।

  • সরকার শিল্পের প্রণোদনা দিতে বেশ উদার হয়েছে, কিন্তু ঝোঁকটা ছিল বড় দ্যোক্তাদের দিকে।

  • সামাজিক সুরক্ষা আর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রশ্ন :

এ বছরের বিশ্ব নারী দিবসের প্রতিপাদ্যে কোভিডের বিশ্বে নারীর সমতা অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিষয়গুলো কি বাংলাদেশে কাজটিকে কঠিনতর করে তুলবে?

হোসেন জিল্লুর: অবশ্যই। নারীর ওপর সন্তান জন্মদানের বোঝা যে বাড়তে পারে, তা আমাদের আমলে নিতে হবে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে একজন মায়ের সন্তান সংখ্যা ৬ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৩-হারে (টিএফআর) নেমেছে। কিন্তু অতিমারির সংকট প্রজননের বোঝা বাড়িয়ে দিতে পারে।
অন্যদিকে দেখুন, একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, দরিদ্র মানুষদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ তেমন নেই। কিন্তু কোভিড হলেই তো কেবল স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন পড়ে না। নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবায় মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে মেয়েদের বঞ্চনা বাড়বে। কেননা মেয়েদের স্বাস্থ্যসেবা পরিবারে বা সমাজে এমনিতেই কম গুরুত্ব পায়।

প্রশ্ন :

পিপিআরসি-বিআইজিডি জরিপের দ্বিতীয় পর্ব দেখেছিল পুরুষের তুলনায় নারীদের জীবিকা ফিরে পাওয়া কঠিন হচ্ছে। কারণ কী?

হোসেন জিল্লুর: নারীদের ওপর কোভিডের অর্থনৈতিক চাপ বেশি হওয়ার একটি কারণ, তাদের পেশার ধরন। পোশাক খাতে কাজ কিছুটা ফিরে এসেছে। কিন্তু ওই খাতের নারী কর্মীদের পারিবারিক আয়-রোজগার হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাঁরা গ্রামে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের ফিরে আসা হয়তো কঠিন হয়েছে।
নারীরা বেশি কাজ করেন সেবা খাতে। খাতটি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। গৃহকর্মীদের প্রায় সবই নারী। সে খাতে চাকরি হারানো ব্যাপক। এর কারণ, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর সংক্রমণভীতি। চাকরির সুযোগ স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আগেই সংক্রমণভীতি আবার বেড়ে গেল।
জীবিকা ফিরে পাওয়া নির্ভর করে কাজের ধরনের ওপর। গত বছর করোনা-বন্ধের গোড়ায় রিকশাচালকদের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর অনেকটাই ফিরে এসেছিল। কিন্তু রিকশাচালনায় নারী কই? অনেক নারী রাস্তার পাশে খাবারের দোকান চালাতেন। ব্যবসাটি সেভাবে আর চালু হয়নি।
নির্মাণ খাত কিছুটা সচল হয়েছে। সেখানে অনেক নারী শ্রমিক কাজও করেন। কিন্তু তাঁরা একেবারে অতিদরিদ্র এবং নিঃসহায় নারী, অনেকেই স্বামী পরিত্যক্তা, যাঁদের অন্য কোনো সুযোগ নেই।
আবার, পুরুষের তুলনায় নারীর কাজে ফেরার খরচ বেশি। ধরুন, আপনি একটা ছোট দোকান চালাতেন। সেটা আবার চালু করতে আপনার আর্থিক সহায়তা তো লাগবে। নারীর জন্য তা জোগাড় করা বেশি কঠিন।
ফিরে আসার সামাজিক খরচও আছে। আমাদের জরিপ দেখেছে, ঢাকার দরিদ্রদের একাংশ বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মেটাতে না পেরে ঢাকা ছেড়েছিল। তাদের শহরে ফেরাটা সহজ নয়।

প্রশ্ন :

আপনাদের জরিপে কি মধ্যবিত্ত নারীদের কাজ হারানোর বিষয়টি উঠে এসেছে? মধ্যবিত্ত নারীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে কী বলবেন?

হোসেন জিল্লুর: জরিপে আমরা দরিদ্র এবং ঝুঁকিতে থাকা অদরিদ্র পরিবারগুলোর পরিস্থিতি দেখেছি। দরিদ্র বলতে বোঝাচ্ছি যাদের অবস্থান দারিদ্র্যরেখার নিচে বলে চিহ্নিত। অন্য অংশটি দারিদ্র্যরেখার ওপরে থাকা নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি মধ্য-মধ্যবিত্ত মানুষ। তারা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আমরা বলেছি, ‘নতুন দরিদ্র’।
বেসরকারি খাতে অনেক নারী নানা ধরনের চাকরি করতেন। তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ধারণা করি। বড় ক্ষতিটা এসেছে কিছু সেবা খাত ভেঙে পড়ায়। যেমন ধরুন, বেসরকারি শিক্ষা খাতে বহু নারী নিয়োজিত ছিলেন। গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। বেসরকারি অনেক কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুল বেতন দিতে পারছে না। কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ নারী।
আমাদের তিন পর্বের জরিপ আরও দেখেছে, বিউটি পারলারগুলোর কর্মীরা চাকরি হারিয়েছেন। তাঁরা প্রায় সবাই নারী। তাঁরা কিন্তু দরিদ্র ছিলেন না, হয়তো ঝুঁকিতে থাকা অদরিদ্র শ্রেণিরও ওপরের স্তরে ছিলেন। ঢাকায় কিছু বিউটি পারলার খুলেছিল, তবে খাতটি এখনো সচল হয়নি।
ছোট এনজিওগুলো, বিশেষত আঞ্চলিক এনজিও, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকগুলোই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করে। তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তহবিল সংকটও আছে। কর্মীদের বড় অংশ হারানো চাকরি এখনো ফিরে পাননি; তাঁদের মধ্যে নারী অনেক।
দেশজুড়ে অনেক বেসরকারি ক্লিনিক আছে। স্বাস্থ্য খাত তো কেবল সেবাদানকারী নয়, খাতটি বড় নিয়োগকর্তাও। এসব ক্লিনিকে বহু নারী ডাক্তার, নার্স বা কর্মচারী আছেন। তাঁদের চাকরি অনেকাংশে ফিরে আসেনি।

প্রশ্ন :

কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তাদের পরিস্থিতি কী দেখছেন?

হোসেন জিল্লুর: এই খাতগুলোতে নারী-পুরুষনির্বিশেষে উদ্যোক্তারা চরম ক্ষতিতে পড়েছেন। কিছু উপখাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু বড় অংশের অবস্থাই এখনো নড়বড়ে। বিশেষত নাজুক রয়েছে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলোতে মূলত নারীর উপস্থিতি বেশি।
সরকার শিল্পের প্রণোদনা দিতে বেশ উদার হয়েছে, কিন্তু ঝোঁকটা ছিল বড় উদ্যোক্তাদের দিকে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার কিছু প্রণোদনা বরাদ্দ করেছে, তবে বিতরণের ভার দিয়েছে ব্যাংককে।
এর বড় অংশ বিতরিত হয়নি, কিন্তু সরকার তার কারণ খতিয়ে দেখছে না। আমার মতে এর কারণ, বিতরণের মাধ্যমটি উপযুক্ত নয়। এই উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগ ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার কাছ থেকে পুঁজি নেয়, ব্যাংকের কাছে যায় না।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বাড়তি বাধা হচ্ছে, তাঁরা ব্যাংকে যোগাযোগ করে নিজেদের স্বার্থ আদায় করার তরিকা জানেন না। তাঁদের ঘর সামলাতে হয়, করোনাকালে সেটার চাপ বেড়েছে। দৌড়াদৌড়ি করে ঋণ আদায়ের সময় কই?

প্রশ্ন :

করোনাকালে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং অন্যান্য ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

হোসেন জিল্লুর: অনেকগুলো স্তরে সহায়তার নীতি এবং সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ দরকার। আমি বিশেষভাবে বলব, ‘নতুন দরিদ্র’ নারীদের আর্থিক ও অন্যান্য চাহিদা মেটানোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা ভাবতে হবে। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কাজ দরকার।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি পাওয়ার বাধাগুলোতে নজর দিতেই হবে এবং দেখতে হবে নারীরা কোথায় বেশি ঠেকে যাচ্ছেন। পুরো অর্থনীতিকে সবল করার লক্ষ্যে নীতির সমর্থন লাগবে, যার সুফল নারীরাও পাবেন।
শিক্ষার সংকট মেয়েদের জন্য কী বৈষম্য তৈরি করতে পারে, সেটা খুব ভালোভাবে দেখতে হবে। বিষয়টি আলোচনায় যথেষ্ট আসছে না। একইভাবে গ্রাম ও শহরে নারীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষত প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ লাগবে। তবে শহরের নারীরা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। ইউনিসেফের জন্য নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে পিপিআরসি একটা সমীক্ষা করছে। সেটা বলছে, সেখানে খুব জোরালো নজর লাগবে।

প্রশ্ন :

এ কাজগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব কাদের, কারা কাজগুলো করবে?

হোসেন জিল্লুর: দায়িত্ব সবার। বড় ভূমিকা অবশ্য সরকারকেই নিতে হবে। টাকা আর নীতিমালা জোগানো সরকারেরই কাজ। যেমনটা বলেছি, সরকার প্রণোদনা দিতে উদার হয়েছে। তবে বেশি উদার হয়েছে বড় উদ্যোক্তাদের প্রতি। ছোট উদ্যোক্তারা কম গুরুত্ব পেয়েছেন, নারী আরও কম। সামাজিক সুরক্ষার কাজও বাড়াতে হবে।
বাজেটে যথোপযুক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। পিপিআরসি বিশ্বব্যাংকের জন্য কোভিডকালে নগর সামাজিক সুরক্ষাবিষয়ক একটি সমীক্ষার কাজ শেষ করল। সরকারের বরাদ্দ ও পদক্ষেপে আমরা বহুমাত্রিক সমস্যা দেখতে পেয়েছি।
স্থানীয় সরকারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার টাকা দিতে পারে, কিন্তু কাজটা তো ভালোভাবে করতে হবে। গত বছর সরকার ৫০ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল। উপকারভোগীর তালিকায় অনিয়মের কারণে দুই-তৃতীয়াংশকে বিতরণের পর তা আটকে যায়।
সঠিক ডেটাবেইস আর তালিকা খুব জরুরি। কাকে সহায়তা দেবেন, তা না জানলে আপনি হেলিকপ্টার থেকে টাকা ছড়াতে পারেন। সেটা গিয়ে ঢুকবে যথেষ্ট সুবিধাপ্রাপ্তদের পকেটে। সুতরাং গবেষকদের বড় ভূমিকা থাকবে। এনজিও, বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ—দায়িত্বটা সবারই। তবে কার কী কাজ, তা চিহ্নিত করা দরকার। গবেষকেরা তো আর আর টাকা দেবেন না। টাকা সরকারের, সরকারকেই তা জোগাতে হবে।

প্রশ্ন :

চলতি জাতীয় বাজেট এসেছে করোনা-সংকটের মধ্যে। সেটাতে চাহিদাগুলোর প্রতিফলন কতটা ছিল?

হোসেন জিল্লুর: বিশ্বব্যাংকের জন্য সমীক্ষাপত্রটি করতে গিয়ে আমরা বাজেটের একরকম ফরেনসিক তদন্ত করেছি। মনে হয়েছে, সরকার আসলে কোভিডকে স্বল্পমেয়াদি সংকট হিসেবে দেখে আপৎকালীন কিছু সহায়তা দিয়ে মোকাবিলা করতে চেয়েছে। বিশেষ করে, সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে।
উদ্ভাবনী চিন্তার প্রতিফলন বলতে হয়তো এটুকুই যে সরকার নগরবাসী দরিদ্রদের চাহিদা সম্পর্কে আরেকটু সজাগ হয়েছে। তবে সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য আর শিক্ষা খাতের বরাদ্দে প্রতিফলন যৎসামান্য। এতটাই যে আপনি মনে করতে পারেন, কোভিড-১৯ বলে কিছু ঘটেনি।
বাজেটে সরকারের মূল ঝোঁক ছিল সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা। অবশ্য শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই কাজ হবে না। সেটা সদ্ব্যবহারের দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়াও নিশ্চিত করতে হবে। এই ত্রিমুখী কাজে নগর এলাকায় সামাজিক সুরক্ষা আর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রশ্ন :

কোভিড পরিস্থিতিতে দুর্গত নারীদের সাহায্যে এনজিওদের ভূমিকা সম্পর্কে কী বলবেন?

হোসেন জিল্লুর: এসব কাজে এনজিওরা কম সক্রিয়। বড় ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলো কিছু কর্মসূচি হয়তো নিচ্ছে। কিন্তু ছোটরা নিজেরাই এখনো কমবেশি বিপদে আছে। ক্ষুদ্রঋণের কাজ আবার শুরু হয় গত বছরের জুনে। তবে ঋণগ্রহীতারা কিস্তি দিতে পারছিলেন না। কাজ ঝিমিয়ে পড়ে। ক্রমে ঋণ সচল হলে আয়-রোজগার হতে থাকে। সেপ্টেম্বরের আগে কিস্তি আদায় পুরোপুরি শুরু হতে পারেনি।