কোয়েল পুষে স্বপ্নপূরণ

নিজের খামারে কাজে ব্যস্ত শামীম আল মামুন l প্রথম আলো
নিজের খামারে কাজে ব্যস্ত শামীম আল মামুন l প্রথম আলো

ছোটবেলা থেকেই কোয়েল পোষার শখ ছিল টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের শামীম আল মামুনের। কিন্তু সেই সুযোগ ও সামর্থ্য ছিল না তাঁর। তাই অর্থ উপার্জনের জন্য পাড়ি জমান বিদেশে। ছয় বছর পর দেশে ফিরে শুরু করেন কোয়েল পালন। এখন তিনি কোয়েল ও এর ডিম বিক্রি করে বেশ স্বাবলম্বী।
শামীম আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছয় বছর বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে ২০১২ সালে বাড়ির পাশে ২০ শতাংশ জমির ওপর খামার করি। প্রথমে ৫০০ কোয়েলের বাচ্চা কিনে পোষা শুরু করি। বর্তমানে খামারে কোয়েল পাখির সংখ্যা ১২ হাজার। এর মধ্যে লেয়ার কোয়েল প্রায় সাত হাজার। পাঁচ হাজার কোয়েল নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। এসব ডিম ও ব্রয়লার ঢাকা ও গাজীপুরসহ দেশের ৮-১০টি স্থানে সরবরাহ করছি। এতে আমার মাসিক আয় লাখ টাকার ওপরে। এ ছাড়া তৈরি করা হয়েছে একটি কোয়েল পাখির হ্যাচারি। শীত কমলেই শুরু হবে হ্যাচারির কাজ।’
সম্প্রতি কোয়েলের খামারে গিয়ে দেখা যায়, শামীম ব্যস্ত সময় পার করছেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘প্রথমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি বগুড়ায় কোয়েল পাখির বাচ্চা পাওয়া যায়। ছুটে যাই সেখানে। ২০ হাজার টাকায় ৫০০ বাচ্চা কিনে যাত্রা শুরু করি। বই পড়ে, প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে এবং বাচ্চা বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়ম জেনে নিজে নিজেই কোয়েলের যত্ন নিতে থাকি। এভাবে ব্যস্ততার মধ্যেই খুঁজে পাই একধরনের বিনোদন। সেখান থেকে প্রতি মাসে আয় হওয়ায় উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। বাড়াতে থাকি কোয়েলের সংখ্যা। বেড়ে যায় কাজের পরিধি। এখন খামারে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছি।’
শামীম আরও বলেন, ‘আমাকে দেখে ইতিমধ্যে সখীপুরে আরও পাঁচ-ছয়জন ব্যবসায়ী কোয়েলের খামার করেছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে খামার দেখার জন্য আসা লোকজন জানতে চান কোয়েল পোষার নিয়মকানুন।’
স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানায়, কোয়েল পাখি পরিবেশবান্ধব। ডিম থেকে ফোটার ছয়-সাত সপ্তাহের মধ্যে লেয়ার জাতের কোয়েল ডিম দেওয়া শুরু করে। টানা ১৮ মাস ডিম দেয়। আর ব্রয়লার জাতের কোয়েল চার সপ্তাহের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। একটি কোয়েল বছরে সাধারণত ২৮০ থেকে ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
সখীপুর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, ‘আমি সেদ্ধ ডিম বিক্রি করি। মুরগির চেয়ে কোয়েলের ডিমে লাভ বেশি। এ ডিমের চাহিদাও বেশি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হেলাল আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, কোয়েল পালন অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা। এর মাংস, ডিম খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। রোগীর পথ্য। ডিম ও মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকায় তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মুরগির ভ্যাকসিন দিয়েই কোয়েলের চিকিৎসা হয়।