খাজা নাজিম উদ্দিন নামের স্কুলের নাম বদলানো হোক

নাটোরের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
নাটোরের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ। নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় গ্রামে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠায় অবদান থাকুক আর না থাকুক, আবার এ এলাকায় জন্ম হোক বা না হোক, তাঁর নামেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়। স্কুলটির বয়স শত বছর প্রায়।

মাঝে চলে গেছে ১৯৫২, ১৯৭১, ১৯৯০, ১৯৯৬ সাল; জাতীয়ভাবে ঘটে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা। তবুও রয়ে গেছে এ কলঙ্কিত নাম! বিষয়টি খুবই লজ্জার এবং সবাইকে তাক করে দেওয়ার মতো ঘটনা। নিঃসন্দেহে সুধীজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিবেক অনেক আগেই নাড়া দিয়েছে। এ নাম থাকার পেছনে কোনো যুক্তি পাওয়া যায় না, তবু পরিবর্তন হয়নি।

নাম পরিবর্তনের চেষ্টা কেউ করেছেন কি না, কেউ উদ্যোগ নিয়েছিলেন কি না, জানা নেই। তবে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত এই দেশে ‘খাজা নাজিম উদ্দিন’-এর নামে স্কুলের নাম থাকে কীভাবে? কেন এখনো পরিবর্তন করা হয়নি? যে দেশে ভাষার জন্য যুদ্ধ হয়, মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য লড়াই করেন, সেই দেশে একজন ভাষাবিদ্বেষীর নামেই স্কুল কেন? যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, তখন খাজা নাজিম উদ্দিন নীরব ছিলেন। কিন্তু ছাত্ররা ঠিকই এর প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারের রক্ত ঝরলেও খাজা নাজিম উদ্দিনের অবস্থান ছিল বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে। তখন তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাকে পাকিস্তানের¯অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে তিনি ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করেননি। ঢাকার নবাব পরিবারের জন্মগ্রহণ করা একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ (পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, ১৯৪৮-১৯৫১) হয়েও বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। আর এর পরেই ঘটনার ধারাবাহিকতায় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ হলো এবং বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল। সেই বিতর্কিত খাজা নাজিম উদ্দিনের নামে স্বাধীন বাংলাদেশে স্কুলের নাম!

নাটোরে এবং গুরুদাসপুরে রয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ। তাঁদের নামেও হতে পারে এ স্কুলের পরিবর্তিত নামটি।

স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে যাঁর নামেই হোক না কেন, নামটি পরিবর্তন করা জরুরি। স্কুলটির নাম পরিবর্তন করা হলে ভাষাসৈনিকদের চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে। আর তার জন্য চাই সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকšও সাহসী উদ্যোগ। ভাষার মাসে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে আমরা স্কুলটির নাম পরিবর্তনের দাবি করতেই পারি।

প্রসঙ্গত, গুরুদাসপুরে শহীদ শামসুজ্জোহার নামে একটি সরকারি কলেজ রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে গুরুদাসপুরবাসী কলেজটির নামকরণ করেন। পরে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।

লেখক: রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিতে কর্মরত