খালাসপ্রাপ্ত ৭৫ জনসহ ৮৩ আসামির ক্ষেত্রে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালাস পাওয়া ৭৫ জন এবং সাজা কমে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ৮ আসামি মিলিয়ে ৮৩ জনের ক্ষেত্রে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর হাইকোর্টে খালাস পাওয়া চারজনের ক্ষেত্রে ১৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর অপর ৭৯ জনের ক্ষেত্রে ২২ ডিসেম্বর পৃথক ১৯টি লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।

আজ  বুধবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলায় ৮৩ জনের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ২০টি লিভ টু আপিল করেছে। হাইকোর্টের রায়ে তাঁরা খালাস পেয়েছিলেন এবং সাজা কমেছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, হাইকোর্টে খালাস পাওয়া হাবিলদার মো. খায়রুল আলম, নায়েব সুবেদার আলী আকবর, হাবিলদার বিল্লাল হোসেন ও সিপাহি মেজবাহ উদ্দিনের (পলাতক) বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আটজন ও যাবজ্জীবন থেকে খালাসপ্রাপ্ত ১১ জনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারিক আদালতে ও হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এমন ৩২ জন এবং ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া ২১ জন, ৭ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া ৫ জন, ১৩ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া একজন ও ৬ বছরের সাজা থেকে খালাস পাওয়া একজনের বিরুদ্ধে পৃথক লিভ টু আপিল করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। সেদিন ঢাকার পিলখানায় (বিজিবি সদর দপ্তর) নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহের সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। নৃশংস ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত।

হত্যা মামলার ৮৪৬ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয় আর খালাস পান ২৭৮ জন। দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ খালাস পাওয়া ৬৯ জনের ক্ষেত্রে পৃথক আপিল করে।

তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।