খুঁজে পাওয়া গেল না সেই ‘সিনিয়র অফিসারকে’

রায়হান আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদকে হত্যা ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আলোচিত এ ঘটনায় বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাকে মূল অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আকবর ধরা পড়ার আগে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পুলিশের তিনজন সদস্য, রায়হানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা এক ব্যক্তি ও আকবরকে পালাতে সহায়তা করা একজনসহ ছয়জনকে অভিযোগপত্রে আসামি করার কথা জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তবে ধরা পড়ার পর এসআই আকবর বলেছিলেন, এক ‘সিনিয়র অফিসারের’ প্ররোচনায় তিনি পালিয়েছিলেন। তবে তদন্তে পুলিশ তাঁর পালানোর পেছনে নিজেদের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পায়নি।

পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে আসার পর ঘটনাটি হত্যা বলে প্রতীয়মান হয়। মামলার তদন্ত প্রায় শেষ। আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে তদন্ত কার্যক্রম গুছিয়ে আনা হচ্ছে। ছোট ছোট বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সামনের বছরের শুরুতেই প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে।

সিলেট নগরীর আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়।

এসআই আকবর হোসেন
ফেসবুক থেকে নেওয়া

পিবিআই জানায়, ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর দিনই ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রথম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টেও নির্যাতনের বিষয়টি উঠে আসে।

এদিকে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান আকবর। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বরখাস্ত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন অর রশিদ এবং প্রত্যাহার হওয়া এএসআই আশেক এলাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁরা কেউ ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেননি।

ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে আসার পর ঘটনাটি হত্যা বলে প্রতীয়মান হয়। মামলার তদন্ত প্রায় শেষ।
মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান, পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসআই আকবর, এএসআই আশেক, কনস্টেবল টিটু ও হারুন রিমান্ডে ঘটনার যেরকম বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনের মিল রয়েছে। এর সঙ্গে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ, আসামিদের উদ্ধার করা সিম, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে অপরাধী চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আকবরকে পালাতে সহায়তাকারী হিসেবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিআইয়ের তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসআই (বরখাস্ত) আকবর ধরা পড়ার পর ভারতীয় খাসিয়াদের কাছে ‘সিনিয়র এক অফিসারের’ প্ররোচনায় তিনি দেশ থেকে পালিয়েছিলেন বলে বক্তব্য দেন। তাঁর এমন বক্তব্যে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানানো হয়। তবে তদন্তে কোনো পুলিশ নয়, বাইরে থেকে আকবরের সঙ্গে শুধু একজনেরই যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে ওই ব্যক্তিকেও অভিযুক্ত করা হবে।

আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ উপপরিদর্শক হাসান উদ্দিনকে ২২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২৫ নভেম্বর দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ঘটনার সময় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আবদুল বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।