গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদেরই সুবিধা হবে: আইনমন্ত্রী

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মী আইন বিষয়ে সংলাপে কথা বলেন আইনমন্ত্রীছবি: প্রথম আলো

প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজন আছে বলে জানান আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আপনারা আইনটি পরিষ্কার (স্পষ্ট) করার কথা বলেন, বাতিল করার কথা বইলেন না। আইনটিতে আপনাদের সুবিধা হবে।’

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে  গণমাধ্যমকর্মী আইন বিষয়ে এক সংলাপে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রস্তাবিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন এটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য  ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আছে। তবে আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আপত্তি উঠেছে। সাংবাদিকেরা বলছেন, এই আইনের বিভিন্ন ধারা সাংবাদিকদের মর্যাদা ও স্বার্থবিরোধী। এ জন্য এর সংশোধন প্রয়োজন।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজন রয়েছে। তারপরও এই আইনের বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য যাতে দিতে পারেন, সেটির জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকেও আমি বলে দেব, যাতে তারা সাংবাদিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আপনারা আইনটি পরিষ্কার করার কথা বলেন, বাতিল করার কথা বইলেন না। আইনটিতে আপনাদের সুবিধা হবে।’

প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যমকর্মীর বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হলে স্বাভাবিক অবসরে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, এটি কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের জন্যই ভালো হবে। এখানে কিন্তু বলছে না করতেই হবে। অর্থাৎ বাধ্য করা যাবে না।

প্রস্তাবিত এই আইনে যে যে ধারা সম্পর্কে আপত্তি আছে, সেগুলো এবং পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রস্তাব লিখে দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী।

দরকার হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেকে অহেতুক মামলা করছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালে আমি বলেছিলাম, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করার পর তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ আইনে মামলা হলে সঙ্গে সঙ্গে কাউকে যেন গ্রেপ্তার না করা হয়, আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। এর ফলে এখন যত্রতত্র গ্রেপ্তার হচ্ছে না। দরকার হলে এ আইনটিও সংশোধন করা হবে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব জায়গায় সমস্যা আছে, সেখানে সেখানে সংশোধনের কথা জানিয়েছিল সরকার, সেটির অগ্রগতি কতদূর, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে লেজিসলেটিভ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য করা হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইন না থাকলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুল ব্যবহারের অভয়ারণ্য হবে দেশ। তবে এই আইনের যে কয়েকটি জায়গায় অসামঞ্জস্য আছে বলে মনে করা হয়, সেটির বিষয়ে সরকার সচেতন।

উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামীকাল বুধবার তাঁর সঙ্গে বসবেন। তিনিও (প্রতিমন্ত্রী) বলেছেন, এটি পর্যালোচনা করবেন। অংশীজনদের সঙ্গে যাতে আলোচনা করা হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তৈরি উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২ (ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট); বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তৈরি ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস’ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০২১-এর খসড়া নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, সবগুলোর ব্যাপারে আলোচনার মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা হয়, এমন কোনো আইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার করবে না।

বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংলাপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।