গত বছরের তুলনায় গরুর দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা

ঢাকার হাটগুলোতে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম প্রতি মণে ছয় থেকে আট হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের ছোট আকারের যে গরু গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়, এবার তার দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। দাম বেশি চাওয়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, গবাদিপশুর খাবারের দাম বাড়তি। দাম বেশি গরুর মাংসেরও। সংসারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সবকিছুর মিলিত প্রভাব পড়েছে কোরবানির বাজারে।

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট এবং দক্ষিণ সিটি এলাকার সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটে গরু–ছাগল বিক্রি এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। এর বাইরে এবার রাজধানীতে ১৯টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবে ১০টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবে ৯টি হাট। আগামী ৬ জুলাই থেকে এসব হাঁটে আনুষ্ঠানিকভাবে গরু–ছাগল কেনাবেচা শুরু হবে। চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত।

আজ শনিবার রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী হাটে গিয়ে গত বছরের তুলনায় বেশি দামে গরু বিক্রি হতেও দেখা গেছে। ছাগলও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।
ঝিনাইদহের গরুর পাইকার শহীদুল ইসলাম। ওজনে আড়াই থেকে পাঁচ মণ হবে এমন ছোট ও মাঝারি আকারের আটটি গরু তিনি হাটে এনেছেন। একেকটি গরুর জন্য দাম চাইছেন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে আড়াই মণ ওজনের দুটি গরুর বিক্রি করেছেন ৮০ হাজার টাকা করে।

শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে প্রায় ১৩০ টাকা। শুধু মাংসের হিসাবেই এক মণে (৪০ কেজি) দাম পাঁচ হাজার টাকার বেশি। এর সঙ্গে গো–খাদ্য ও মানুষের খাবারের দামও বাড়তি। সব মিলিয়ে স্থানীয় হাটবাজারেই এবার গরুর দাম বেশি।

কুষ্টিয়ার পাইকার নাসির হোসেন। গাবতলী হাটে তাঁর গরুর আছে ৬২টি। আকারের দিক থেকে তাঁর আনা একেকটি গরু আড়াই থেকে থেকে সাত মণ ওজনের। এসব গরুর জন্য তিনি দাম চাইছেন ৯০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। বিক্রি করছেন কয়েক হাজার টাকা কমে। আর প্রায় ১০ মণ ওজনের কয়েকটি গরুর জন্য দাম চাইছেন ৩ লাখ টাকার বেশি।

নাসির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় হাট থেকেই আড়াই থেকে ৩ মণ ওজনের গরু ৭৩ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। সঙ্গে একেকটি গরুর পেছনে পরিবহন খরচ আরও দুই হাজার টাকা করে। একেকটি গরুতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা লাভ রাখতে চান তাঁরা।

টিসিবির বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, গত এক দশকে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৩৯০ টাকা। ২০১৩ সালের জুনে গরুর মাংস বিক্রি হতো ২৭৫ টাকা কেজি দরে। আর চলতি বছরের জুনে বিক্রি হয়েছে ৬৬৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রায় ১০ বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ২৪১ দশমিক ৮২ শতাংশ বা প্রায় আড়াই গুণ। যদিও রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী, এক যুগের ব্যবধানে দেশে গরুর সংখ্যা বেড়েছে। শুমারি অনুযায়ী গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩। এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি।

পাইকারেরা বলছেন, কোরবানি সামনে রেখে নতুন করে গরুর দামে খুব বেশি হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এমনিতেই বাজারে দাম তুলনামূলক বেশি। এর বাইরে কোনো কোনো বিক্রেতা বা খামারি কোরবানি উপলক্ষে দাম একটু বাড়িয়ে চাইতে পারেন।

কুষ্টিয়ার কালু ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের খাবার ও গরুর খাবার দুটির দামই বেশি। ৫০ কেজির ১ বস্তা ধানের কুড়া গত বছর ৪৫০ টাকা ছিল। এবার তা ৮০০ টাকা হয়েছে। ১ হাজার ১০০ টাকা দামের ২০ কেজির ১ প্যাকেট ভুট্টার ভুসির দাম এখন ১ হাজার ৭০০ টাকা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এবার কোরবানির হাটের জন্য সরবরাহ করা গবাদিপশুর সংখ্যা দুই লাখের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। প্রায় ২৮ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়নি।