গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিবর্তন উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন
ছবি: বাসস

বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আরও মনোযোগের সঙ্গে মানবকল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিবর্তন দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব সময় চাই মানবকল্যাণেই কাজ করতে হবে এবং আপনারা এটা মনে রাখবেন, আমরা যে ফেলোশিপ দিচ্ছি বা অর্থ বরাদ্দ করেছি, সেটা কিন্তু জনগণেরই অর্থ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই তা যেন জনগণের কল্যাণে লাগে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে আপনাদের গবেষণার কাজ আপনারা চালিয়ে যাবেন।’

বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জায়গা কম হলেও সেই জায়গার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। কাজেই সেটা মাথায় রেখেই গবেষণায় আরও জোর দিতে হবে, যাতে বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে উঠতে পারে। সেটাই আমরা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি হলে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে। তাঁরা সেদিকেই লক্ষ রাখছেন। আর প্রতিটি শিল্পকারখানায় গবেষণা ও উন্নয়ন শাখাকে কার্যকর-শক্তিশালী করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই সেখানেও গবেষণার একান্তভাবে প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমেই আমরা ব্যয় কমাতে এবং উৎপাদনের উৎকর্ষ বাড়াতে পারি। এবং বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারি।’

রপ্তানি পণ্য বাড়ানোর জন্যও গবেষণার প্রয়োজন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আশা করি, নতুন নতুন পণ্য সৃষ্টি এবং আমাদের রপ্তানি যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। সমগ্র বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তাঁর সরকার সামনে এগিয়ে যাবে।

অবকাঠামো উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর সুফল দেশবাসী পাবে, দেশের মানুষ পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। আর করোনাভাইরাস যেহেতু পারেনি, সেটা আর কেউ পারবে না। এটাই তাঁর বিশ্বাস।

জাতির পিতা মাটি ও মানুষ নিয়েই একদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাতে দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তাই আমরা মনে করি, এখন এটা আমাদের দায়িত্ব। তিনি স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে দেশকে রেখে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছি। এবং ভবিষ্যতে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করব, ইনশা আল্লাহ।’

যাঁরা ফেলোশিপ পেয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণা ও বিজ্ঞানের প্রসার একটি দেশের উন্নয়নে একান্ত অপরিহার্য। কাজেই আপনারা গবেষণা চালিয়ে যাবেন এবং আপনাদের পথ ধরে আগামী প্রজন্মও বিজ্ঞানের গবেষণা করবে, সেটাই আমরা চাই।’

বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গবেষণা-অধ্যয়নে এমএস, এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর প্রোগ্রামের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চলতি (২০২০-২০২১) অর্থবছর পর্যন্ত ৫৯৬ জনকে ১৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে।

তা ছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৩০ জন ছাত্রছাত্রী ও গবেষকের মধ্যে ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে।

ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা-উন্নয়ন কাজে উৎসাহ-সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে বিশেষ অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৮২টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৫২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফেলোশিপ ও অনুদানের চেক বিজ্ঞানী-গবেষকদের হাতে তুলে দেন।