গর্তে ভরা সড়কে কষ্টের পথচলা

সড়কে বড় গর্ত। ছবিটি দারুস সালাম এলাকা থেকে গত ২৯ জুলাই তোলা l প্রথম আলো
সড়কে বড় গর্ত। ছবিটি দারুস সালাম এলাকা থেকে গত ২৯ জুলাই তোলা l প্রথম আলো

শুকনো মৌসুমটা ঢাকাবাসীর কেটেছে ধুলার রাজ্যে। বর্ষার আগমন ঘটেছে আরও দুর্ভোগ নিয়ে। একদিকে জলাবদ্ধতায় নাকাল ঢাকাবাসী। অন্যদিকে বড় বড় গর্তের কারণে সড়কে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
মিরপুর থেকে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি থেকে পুরান ঢাকার অলিগলি—সর্বত্রই কমবেশি সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে মিরপুর, রামপুরা, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী এলাকায় সড়কের অবস্থা খুব খারাপ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুম আসার আগে ভাঙা সড়ক সংস্কার না করা, সংস্কার হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই পিচ উঠে যাওয়া, সড়কের নকশায় যতটা ভার বহনের ক্ষমতা রয়েছে, এর চেয়ে ভারী যানবাহন চলাচল, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই সড়ক প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় এসেছে, যানজটের কারণে ঢাকায় এখন ঘণ্টায় গড়ে সাত কিলোমিটারের কম গতিতে যানবাহন চলাচল করে। এতে যানজটে আটকে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বর্ষা শুরুর পর প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাবাসীকে যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে। পুলিশ ও পরিবহনশ্রমিকেরা বলছেন, জলাবদ্ধতা আর গর্তে ভরা সড়ক যানবাহনের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। বাড়ছে যানজট।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা প্রথম আলোর দুজন প্রতিবেদক ও তিনজন আলোকচিত্রী ঘুরে দেখেছেন গর্তে ভরা সড়কে কষ্টের পথচলা।
মিরপুর রোড
গলি বাদ দিলে ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেহাল আসাদগেট থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়ক। এর মধ্যে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে, শ্যামলী পদচারী-সেতু, শ্যামলী-কল্যাণপুরের মাঝখানে বড় বড় গর্ত দেখা যায়। আর দারুস সালাম থেকে আমিনবাজার সেতু পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গর্ত এত বড় যে তাতে প্রায়ই যানবাহনের চাকা আটকে যাচ্ছে। ফলে যানজট লেগেই আছে।
গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী-জিরানী রুটের ঠিকানা পরিবহনের চালক রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দারুস সালাম মসজিদের সামনে ও আমিনবাজার সেতুর গোড়ায় এলে বাসে শুধু মটমট আওয়াজ হয়। এপাশ-ওপাশ দুলতে থাকে। প্রায়ই বাসের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাচ্ছে।’
এই রুটের নিয়মিত যাত্রী রাজিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আগের সপ্তাহে জলাবদ্ধতা ও খানাখন্দে ঢাকা অচল হওয়ার পর আস্ত ইট ফেলে কিছু মেরামতের কাজ চোখে পড়ে। কিন্তু পাঁচ-ছয় দিন না যেতেই এর চিহ্ন নেই। বড় বড় গর্তের কারণে ফাঁকা সড়কেও বাসের গতি ওঠে না।
বনশ্রী প্রধান সড়ক
রামপুরা সেতু থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে গর্ত আরও বড় হয়েছে। এর মধ্যে রামপুরা সেতু থেকে বনশ্রীর প্রবেশমুখে গর্ত আর কাদাপানিতে সয়লাব সড়কে থেমে থেমে যানবাহন চলতে দেখা যায়। বনশ্রীর সি ব্লকে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ভাঙাচোরা আরও বেশি।
বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা সোলেমান ভূঁইয়া বলেন, বনশ্রী আবাসিক এলাকা থেকে বাড্ডা কিংবা রামপুরা সড়কে ওঠা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাতে বড় ট্রাক চলাচল করার কারণে গর্ত দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
মহাখালী
মহাখালী রেলক্রসিং থেকে সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই সিটি করপোরেশনের নালা বসানোর কাজ চলছে। গর্ত খুঁড়ে তোলা মাটি সড়কেই স্তূপ করে রাখার কারণে যান চলাচলের পথ কমে গেছে। আর মাঝসড়কে স্থানে স্থানে বড় গর্ত তো আছেই। ফলে যানবাহন চলে লাফিয়ে লাফিয়ে। মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে যানজট লেগেই থাকছে।
রামপুরা-মালিবাগ সড়ক
রামপুরা সেতু থেকে মালিবাগ পর্যন্ত সড়কে চলছে উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ। নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের নিচের সড়কে এখন আর পিচ অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। বড় বড় গর্ত হাঁ হয়ে আছে।
বাসাবো-মাদারটেক
বিশ্বরোড থেকে বাসাবো হয়ে নন্দীপাড়া পর্যন্ত সড়কটি মূল সড়ক নয়। তবে মূল সড়কে ওঠার জন্য স্থানীয় মানুষের একমাত্র অবলম্বন এই পথটি এখন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত। একসময় সড়কটিতে পিচ ছিল, তা এখন আর দেখে বোঝার উপায় নেই। হেলেদুলে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যাত্রীরা এক সেকেন্ডের জন্যও স্থির হয়ে বসতে পারছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ইফতিখার ইসলাম বলেন, এই সড়কে একবার যাতায়াত করলে রীতিমতো কোমর ব্যথা হয়ে যায়।
মিরপুর এলাকা
মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত সড়কে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জায়গায় জায়গায় ছোট-বড় গর্ত। দেখা যায়, এবড়োখেবড়ো সড়ক যান চলাচলের উপযোগী রাখতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে গর্তগুলোতে ইট ফেলা হয়েছে।
আগারগাঁও এলাকায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পরিসংখ্যান ব্যুরো, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সদর দপ্তর। আশপাশেই রয়েছে নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের মতো জরুরি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এই এলাকার প্রতিটি সড়কই ভাঙা, বেহাল। এর মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন হয়ে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের সামনে দিয়ে যাওয়া সড়কের অবস্থা সবচেয়ে করুণ।