গাইনি ও শিশুবিশেষজ্ঞ নেই ১০ বছর, সেবা ব্যাহত

চিকিৎসক ও সেবিকা-সংকটে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ১০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। এদের মধ্যে গাইনি, সার্জারি ও শিশুবিশেষজ্ঞের পদ শূন্য। এ ছাড়া আটজন সেবিকার বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র একজন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে গাইনি, শিশু, অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা আছেন। অপর একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রেষণে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে আছেন। আয়ার দুটি পদ পাঁচ বছর ধরে শূন্য। পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা গেছে, অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রসূতিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই প্রসূতিদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে লক্ষ্মীপুর অথবা নোয়াখালী সদর হাসপাতালে যেতে হয়। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের রোগী দেখতে হয়। ১০ বছর ধরে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে।
গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান তাঁর চেম্বারে রোগী দেখছেন। সেখানে রোগীদের ভিড়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের চেম্বারে ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আমিনুল ইসলাম জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তিনি ৬০ জন রোগী দেখেছেন। আরও ৬০ জন রোগী দেখতে হবে।
এই সময় চরজগবন্ধু গ্রামের মো. ইউসুফ তাঁর আট মাসের শিশুকন্যা রুহিকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু শিশুবিশেষজ্ঞ না থাকায় তিনি তাঁর শিশুর চিকিৎসা না করিয়ে লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে পাঠান। একইভাবে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা করইতোলা গ্রামের কুলছুম, তোরাবগঞ্জের সিরাজ মিয়া, বালুচরের রাশেদা বেগমসহ অনেককে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ফিরে গেছেন।
পশ্চিম মাইজচরার কুসুম আক্তার জানান, পেটব্যথা নিয়ে তিনি পাঁচ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল থেকে প্রথম দিন কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স সেলিনা আক্তার জানান, ৩১ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। তাঁর একার পক্ষে সব রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চার শতাধিক রোগী দেখতে হয়। জনবলসংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। চিকিৎসকের শূন্যপদগুলো পূরণের বিষয়ে তিনি প্রতি মাসে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠান। হাসপাতালে ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই।