গাড়িচালকদের জিয়ারা, জিয়ারা...

বাংলাদেশ থেকে আসা বেশির ভাগ হজযাত্রীপ্রথমবারের মতো আজ মক্কায় কাবা শরিফে ও মদিনার মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায় করবেন। হজের আগে এত বড় জামাতে শরিক হতে পারাটাই ভাগ্যের ব্যাপার, বললেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে আসা কে এম হানিফ ও টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এ কে এম মোস্তফা জামান।

হজযাত্রীরা নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ইসলামের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরেফিরে দেখছেন।

মদিনার মসজিদে নববির সামনে ও শহরের অন্যান্য রাস্তায় গাড়িচালকেরা ‘জিয়ারা, জিয়ারা’ বলে হজযাত্রীদের ডাকাডাকি করেন। জিয়ারা মানে হলো ভ্রমণ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখাবেন। ফজরের নামাজের পর বের হলে ভালো দেখা যায়। এসব গাড়ি কয়েকজন মিলে ভাড়া করে মদিনার দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করা যায়। একদিন মাইক্রোবাস ভাড়া করে আমরা জিয়ারায় বেরিয়ে পড়লাম। জিয়ারায় দেখা যায় ওহুদ পাহাড়, মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাঈন। তাতে জনপ্রতি খরচ পড়ল ১০ রিয়াল। এই প্যাকেজে খন্দক নেই। খন্দকের যুদ্ধক্ষেত্র আলাদা আরেক দিন দেখে এসেছি।

ওহুদ পাহাড়

ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় এখানে। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, দুই মাথার মাঝখানে একটু নিচু—এটাই ওহুদের পাহাড়। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

পাহাড়টি মূল্যবান পাথরে সমৃদ্ধ। এখানে দেখা যাবে ওহুদ পাহাড়, যুদ্ধে নবীজি (সা.)–এর দাঁত ভেঙে যাওয়ার পর পেছনে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া পাহাড়, যুদ্ধে শহীদ ৭০ জনের কবর ইত্যাদি।

খন্দক

মক্কার মুশরিক, কুরাইশ, ইহুদি, বেদুইনরা এখানে সম্মিলিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিল, তাই একে আহযাবের যুদ্ধ বলে। এটি খন্দকের যুদ্ধ নামে বেশি পরিচিত। খন্দক অর্থ পরিখা। পরিখা খননের মাধ্যমে শত্রুকে কাবু করার নতুন রণকৌশল ছিল। মুসলমানরা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধের ময়দানে দীর্ঘ পরিখা খনন করেন। হজরত সালমান ফারসি (রা.)–এর পরামর্শে মদিনার সব প্রবেশপথে কূপ ও প্রাচীর তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন মুসলমানরা।

মসজিদে কুবা

মুসলমানদের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবা। ধবধবে সাদা রঙে অন্যান্য নির্মাণশৈলীতে গড়া এই মসজিদের ভেতরের পরিবেশ খুবই সুন্দর। কূপের নাম অনুসারে কুবার নামকরণ করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন তখন তিনি সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে নিজের পবিত্র হাতে এই মসজিদ তৈরি করেন।

কিবলাতাঈন মসজিদ

কিবলাতাঈন মসজিদ মানে দুই কেবলার মসজিদ। আগে বায়তুল আকসার দিকে কেবলা ছিল। নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে ওহি পাওয়ার পর নবী (সা.) ‘মসজিদ আল-আকসা’ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নামাজের মাঝখানে মক্কামুখী হয়ে পরবর্তী অংশ সম্পন্ন করেছিলেন। এ জন্য এই মসজিদের নাম কিবলাতাঈন (দুই কেবলার মসজিদ)। ভেতরে মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদ বাড়ানো হয়েছে।

মসজিদে গামামাহ: গামামাহ শব্দের অর্থ বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে নামাজ পড়েছেন। তাই এটি মসজিদে গামামাহ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে প্রথম ঈদের নামাজ পড়েছেন। একে ঈদগাহের মসজিদও বলা হয়।

কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স: মদিনা শহরে তাবুক সড়কে বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স। এখান থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ কপি কোরআন প্রকাশ করা হয়। এখানে কোরআন শরিফ বিনা মূল্যে বিলি করা হয়।