গাড়ির সহকারীর হুংকার, '...রে দে মাইরা, বামে চাপ দিয়া দে'

‘...রে দে মাইরা, বামে চাপ দিয়া দে’, এমন নানা ভয়ংকর বাক্য প্রায়ই ভেসে আসে সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন গাড়ি থেকে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে এমন বাক্যে ভীত-সন্ত্রস্ত কয়েকজন যাত্রী নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁরা কেনাকাটা শেষে রিকশায় বাড়ি ফেরার পথে এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয় বলে জানান।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা থেকে কেনাকাটা শেষে মহাসড়ক ধরে বাড়ি ফিরতে হয়। আর এই সড়কেই চলাচল করে শত শত বাস, ট্রাক, লেগুনা ও অটোরিকশা। কিন্তু মাওনা চৌরাস্তার নিচে এলেই লেগুনা ও অটোরিকশার বেপরোয়া গতি ও সহকারীদের হাঁকডাক উপস্থিত আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। দেশজুড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের ঝড় বয়ে গেলেও সে সম্পর্কে এসব গাড়ির চালক ও সহকারীরা যেন কিছুই জানেন না।

উপজেলার আনসার রোড থেকে কেনাকাটা করতে আসা শহিদুল ইসলাম মাওনা চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি রিকশায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরছি। রিকশার পাশ দিয়ে খুব দ্রুত চলে যাওয়া যাত্রীবাহী একটি মিনিবাসের চালকের সহকারী হাঁক ছেড়ে বলছে “...রে দে মাইরা, চাপ দিয়া দে, ওই সর সর, মাইরা দিমু কইলাম।” তখন আমাদের রিকশা সামনে দাঁড়ানো একটি রিকশাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।’

বুধবার রঙিলা এলাকা থেকে কেনাকাটা করতে আসা মোহাম্মদ আলী বলেন, সকালে রিকশায় আসার সময় পেছন থেকে একটি লেগুনা তাঁদের রিকশাকে হালকাভাবে ধাক্কা দেয়। নেমে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে লেগুনার চালক রেগে গিয়ে বলেন, ‘রিকশা আগায় না কেন, ধাক্কা দিলেই আগাইব।’

একই অভিযোগ করলেন মাওনা বাজার থেকে সপরিবার বাজার করতে আসা সিনথিয়া শারমিন। তিনি বলেন, ‘সড়কে হেঁটে চলতে হলে জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতে হয়। গাড়িগুলোর গতি দেখলে ভীষণ ভয় লাগে। জনসমাগম দেখলে তাদের গাড়ির গতি যেন আরও বেড়ে যায়।’

শারমিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মহাসড়কে নিজের সন্তানকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটি লেগুনা খুব দ্রুতগতিতে একদম কাছে এসে ব্রেক কষল। আমরা ভয়ে পেছনের সরে দাঁড়াই। আমাদের সরে দাঁড়ানো দেখে গাড়ির চালক যেন মজাই পেলেন। কারণ তিনি তখন আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। এমন ঘটনা প্রায় ঘটে।’

মাওনা চৌরাস্তার ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘সড়কে মোটরসাইকেল চালিয়ে গেলে খুব ভয়ে থাকি। বড় গাড়িগুলো মোটরসাইকেলকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। অনেক সময় তারা ইচ্ছের করেই বাইকের খুব কাছ ঘেঁষে দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায়।’

শ্রীপুর উপজেলার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে প্রতিদিন ছোট-বড় শত শত গাড়ি চলাচল করে। দুর্ঘটনাও ঘটে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা ঘটে চালকদের খামখেয়ালিতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আহম্মাদুল কবির বলেন, সড়কে নিরাপত্তার জন্য চালকদের প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশিক্ষণের সময় মানবিক বিষয়গুলো বক্তব্য আকারে চালকদের বুঝিয়ে বললে সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ বাড়বে। চালকদের বুঝিয়ে বলতে হবে, তাঁদের মতোই পথচারী ও যাত্রীদের জীবনের মূল্য আছে, আছে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন।