গোলাম আযমের দাফন সম্পন্ন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা ও গণহত্যার প্রতীক মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গোলাম আযমকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বেলা সোয়া দুইটার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়িটি মগবাজারের বাসভবনের দিকে রওনা হয়। পৌনে তিনটার দিকে মগবাজারের কাজি অফিস লেনের বাসায় গোলাম আযমের মরদেহ পৌঁছায়। পরে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বাসার পেছনে পারিবারিক কবরস্থানে গোলাম আযমকে দাফনের জন্য নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে দাফন কাজ শেষ হয়।
এর আগে বাদ জোহর তাঁর জানাজা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা একটা ৫০ মিনিটের দিকে গোলাম আযমের জানাজা হয়। এতে তাঁর পরিবারের সদস্য ও দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। জানাজা পড়ান তাঁর চতুর্থ ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী। জানাজার আগে আযমীসহ জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। আযমী বলেন, ‘গোলাম আযমের সঠিক মূল্যায়ন হবে, দীন এ দেশে যদি বিজয়ী হয়।’ আযমী আরও বলেন, ‘গোলাম আজম জ্ঞানত কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কিছু করেননি। এর পরও কেউ যদি তাঁর কথা, আচরণ ও কর্মকাণ্ডে ব্যথা বা আঘাতপ্রাপ্ত হন, তাহলে আপনারা মাফ করে দেবেন। আমি করজোড়ে দেশবাসীর কাছে মাফ চাচ্ছি।’
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মগবাজারের বাসভবন থেকে গোলাম আযমের মরদেহ বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। বায়তুল মোকাররমে গোলাম আজমের জানাজার সুযোগ না দেওয়ার দাবিতে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম ও বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট আলাদাভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে। পরে দুই পক্ষ আলাদাভাবে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের দিকে রওনা হয়। পল্টন পুলিশ বক্সের সামনে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করে। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হাসান গত রাতে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের জানাজা জাতীয় মসজিদে হতে দেওয়া হবে না। এটা প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম গত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে গিয়ে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা। জানাজাকে কেন্দ্র করে আজ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ।
জাতীয় মসজিদে জানাজার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে আজ বেলা ১১টার দিকে গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী দাবি করেন, মসজিদে জানাজার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তার পরও তাঁরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযম গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গোলাম আযমকে ৯০ বছরের সাজা দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছিলেন, তাঁর অপরাধ ছিল মৃত্যুদণ্ডযোগ্য, কিন্তু বয়স বিবেচনা করে তাঁকে ৯০ বছরের সাজা দেওয়া হয়। সেই সাজা ভোগরত অবস্থায় মারা যান তিনি।