গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতার প্রমাণ দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা

পেট্রোবাংলা
ছবি: সংগৃহীত

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) শুনানিতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। এসব প্রশ্নের যথাযথ তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। উল্টো তাদের প্রস্তাবিত খরচের হিসাবে গরমিল পেয়েছে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আজ সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশনের মিলনায়তনে শুনানি হয়। জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি এই শুনানির আয়োজন করে। শুনানির শুরুতে পেট্রোবাংলা (বাংলাদেশ তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন) তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করার পর কারিগরি কমিটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেশ করে। এরপর ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট (ঘনমিটার) গ্যাসের দাম ১৫ টাকা ৩০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, পেট্রোবাংলার খরচ হয় ১২ টাকা ৪৭ পয়সা। অন্যদিকে ক্যাব দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মত দিয়েছে। কারণ, সর্বশেষ ২০২০ সালে প্রতি ইউনিটে পেট্রোবাংলার খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা ধরে একবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ৯ টাকা ৩৬ পয়সা নেওয়া হলেও বাকিটা জ্বালানি সুরক্ষা তহবিল ও সরকারি কোষাগার থেকে ভর্তুকি হিসেবে পেট্রোবাংলাকে দেওয়া হয়।

কারিগরি কমিটি বলছে, এর আগে গ্যাসে দাম বাড়ানোর সময় দিনে গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানির হিসাব করা হয়েছিল। প্রকৃত অর্থে পেট্রোবাংলা দিনে ২৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম আমদানি করেছে। এতে আড়াই হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় করেছে পেট্রোবাংলা। এ অর্থ সমন্বয়ের দাবি জানিয়ে ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম শুনানিতে বলেন, গ্যাসের বর্তমান দাম বহাল রেখে বিভিন্ন কর এবং লুণ্ঠনমূলক ব্যয় কমিয়ে পেট্রোবাংলার ঘাটতি কমানো হোক। তবে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁদের হিসাবে কোনো উদ্বৃত্ত টাকা নেই।

শুনানির একপর্যায়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, পেট্রোবাংলা সম্পর্কে অনেক উচ্চ ধারণা ছিল এবং এখনো তা আছে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে পেট্রোবাংলার ব্যাখ্যা, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জনগণকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

গ্যাসের আমদানির ব্যাপক সমালোচনা করে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে শুনানিতে ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। অনুসন্ধান না করে দেশীয় গ্যাস শেষ বলে আমদানি করা হচ্ছে। অথচ দেশে অনুসন্ধান করা হলে মূল্যবৃদ্ধির জন্য এমন শুনানির কোনো প্রয়োজন হবে না।

শুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুনানিতে অংশ নিয়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

পেট্রোবাংলার পর বিকেলে শুনানিতে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) সঞ্চালন চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। তারা প্রতি ইউনিটের জন্য ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৩ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কারিগরি কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর ৪৮ পয়সা করার যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে জিটিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে নতুন দুটি প্রকল্প খরচও দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বিবেচনায় নিয়েছে কমিটি। তবে মুনাফায় থাকা এ কোম্পানির চার্জ বাড়ানোর বিরোধিতা করেছে ক্যাব।