রাজশাহীর বাগমারায় এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রাম আদালতে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ওই জরিমানা থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কলেজছাত্রীকে দেওয়া হয় ৩৫ হাজারা টাকা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেছেন, বাদী ও আসামির আপত্তি না থাকলে ধর্ষণের বিচার ও লাখ টাকা জরিমানা করা যায়।
তবে রাজশাহী জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ধর্ষণের কোনো বিচার গ্রাম আদালতে করা যাবে না। অন্য কোনো ছোটখাটো ঘটনা ঘটলে সেগুলোর নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীর বাড়ি দ্বীপপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তাঁর এক আত্মীয় (৫০) ওই ছাত্রীর কক্ষে ঢোকেন। পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রী চিৎকার দিলে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ওই ব্যক্তিকে আটক করেন। পরদিন সকালে কলেজছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ওই কলেজছাত্রী ও তাঁর সেই আত্মীয়কে পরিষদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ছাত্রীর কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ রাখা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশিদ, মাহাবুর রহমান, বাদেশ আলী, সান্টু ও দুলাল উদ্দিন বলেন, ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করলে ওই ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় গ্রামের ১৫-২০ জন প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা আইনের মাধ্যমে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু দুলালসহ উপস্থিত অন্য ইউপি সদস্যরা রাতেই জরিমানার ১ লাখ টাকা আদায় করেন ও তা থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কলেজছাত্রীকে ৩৫ হাজার টাকা দেন। তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয় আরও ৫০ হাজার টাকা। আর ১৫ হাজার টাকা ইউপি সদস্য দুলালের কাছে রাখা হয়।
ওই কলেজছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, লোকলজ্জার ভয়ে তিনি এখন বাড়ির বাইরে ও কলেজে যেতে পারছেন না।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘আমি উপস্থিত ছিলাম না। তবে ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনকে মুঠোফোনে গ্রাম আদালতে বিচারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।’ গ্রাম আদালতে ধর্ষণের বিচার ও এত টাকা জরিমানা আদায় করা যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী ও আসামির আপত্তি না থাকলে করা যায়।
ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন বলেন, কলেজছাত্রীর অভিযোগ আসামি স্বীকার করায় তাঁর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। তাঁর কাছে থাকা ১৫ হাজার টাকা পরিষদের তহবিলে জমা দেবেন বলে তিনি দাবি করেন। ধর্ষণের বিচার করা ঠিক হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ক্ষমতা তাঁদের রয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জানতে চাইলে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ধর্ষণের বিচার গ্রাম আদালত কিংবা সালিসে করা যায় না। ধর্ষণের এই ঘটনাটি তাঁর জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।