গ্রামাঞ্চলেও বইমেলা হওয়া দরকার
মফস্বল এলাকায় বইমেলা! ভাবতেই অবাক লাগে। এত দিন শুনে এসেছি বড় বড় শহরে হয় বইমেলা। কিন্তু হঠাৎ মফস্বল এলাকায় বইমেলা। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী একটি মফস্বল এলাকা। যেহেতু ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে বহু আলোচিত কয়লাখনি, পাথরখনিসহ স্বপ্নের স্বপ্নপুরী। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুলবাড়ীতে অনেকেই আসেন খনিসহ বিভিন্ন নিদর্শন জায়গা দেখতে।
মফস্বল এলাকাগুলোয় বই উৎসব কিংবা বইমেলা খুব একটা নজরে পড়ে না। বই পড়াকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল গত বছর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
প্রথমে অনেকে অবাক হন এই ধরনের বইমেলার কথা শুনে। বইমেলা তাও ফুলবাড়ীর মতো উপজেলায়? বহু প্রচার-প্রচারের মধ্য দিয়ে চার দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ মেলায় সহযোগিতা দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন। বইমেলা উদ্বোধনের পর থেকেই বইপিপাসু বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। মেলায় দেশি-বিদেশি লেখকদের ১০ হাজার বই ছিল। মফস্বল এলাকায় ১০ হাজার বইয়ের আয়োজন, অনেক বেশি।
জীবন আলোকিত করতে সহযোগিতা করে বই। বই আমাদের মধ্যে জ্ঞান সৃষ্টি করে, দৃষ্টিভঙ্গিকে মনুষ্যত্বের রূপ দেয়, বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের আগ্রহী ও কৌতূহলী করে তোলে, নতুন চিন্তাচেতনার বীজ বপন করে আলোর পথ দেখায়। আমাদের যোগ্যতর করে তোলে। বই পড়ার মাধ্যমে মেধা ও মনন শাণিত হয়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায় বই। বই আছে বলেই জ্ঞান-বিজ্ঞান এত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে ঢাকায় শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পুরো মাসজুড়েই বইপিপাসুদের পদচারণে মুখরিত থাকে মেলা চত্বর। মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক-লেখিকা-পাঠক-প্রকাশকেরা অধীর আগ্রহে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। বইমেলাগুলোয় মোড়ক উন্মোচন হয় সর্বাধিকসংখ্যক লেখক-লেখিকার বই।
একটি বইমেলায় পাঠক যেমন তাঁর পছন্দের বইটি খুঁজে নিতে পারেন, ঠিক তেমনি একজন লেখকও তাঁর প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে সরাসরি পাঠকের প্রতিক্রিয়া জানতে পারেন। ভাষার মাসে বইমেলার আয়োজন ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি মনে করি, সবার তো সামর্থ্য থাকে না ঢাকা কিংবা বড় বড় শহরে গিয়ে বইমেলা দেখার বা পছন্দের বই কেনার। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারিভাবে প্রতিটি মফস্বল এলাকায় এ ধরনের বইমেলার আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে মফস্বল এলাকার মানুষের মধ্যে বইয়ের প্রতি ভালোবাসাটা দৃঢ় হবে। লেখকেরাও পাবেন আগ্রহ।
প্রত্যেককে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে হলে, নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে হলে বইমেলার বিকল্প নেই। আশা করি, প্রতিটি মফস্বল এলাকায় বইমেলার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। বইমেলা পারে মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গড়ে তুলতে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমাজ থেকে নির্মূল করতে। আলোকিত মানুষ গড়ে সমাজের অপকর্মগুলো নিধন করতে। ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে।
লেখক শিক্ষার্থী, কলামিস্ট, দিনাজপুর