গড়ে ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা জেলার ৬টি আসনে গড়ে ৭৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে খুলনা-২ আসন বাদে অন্য ৫টি আসনে ভোট পড়েছে গড়ে ৮০ দশমিক ৪২ শতাংশ। শুধু খুলনা-২ আসনে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। জেলার ৬টি আসনে মোট ৭৮৬টি কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ১৮ লাখ ১ হাজার ২ জন।

আওয়ামী লীগের ৬ বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ৫ জন প্রার্থী ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন পেয়েছেন ৯০ শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে ধানের শীষের কোনো প্রার্থীই ১৯ শতাংশের বেশি ভোট পাননি।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩৫ প্রার্থীর মধ্যে ধানের শীষের ২ জন প্রার্থীসহ মোট ২৫ প্রার্থীর জামানত বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খুলনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফলের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, খুলনা-১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ৮২ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। ওই আসনের ১০৭টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪২০ জন। তাঁদের মধ্যে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৭টি ভোট পড়েছে। ১ হাজার ৩৯৯টি ভোট বাতিল হওয়ার পর বৈধ ভোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ১২ হাজার ১৮৮।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ১৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৮১ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আমীর এজাজ খান পেয়েছেন ২৮ হাজার ৩২২ ভোট (১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ)। এ ছাড়া কাস্তে প্রতীকে অশোক কুমার সরকার ৮২৮, হাতপাখা প্রতীকে মো. আবু সাঈদ ৫ হাজার ৯৬৫ এবং লাঙ্গল প্রতীকে সুনীল শুভ রায় ৪ হাজার ৯২১ ভোট পেয়েছেন। ভোট গ্রহণের দিন দুপুর ১২টার দিকে সুনীল শুভ রায় ও সাড়ে ১২টার দিকে আমীর এজাজ খান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

খুলনা-২ আসনে (সদর-সোনাডাঙ্গা) ভোট পড়েছে ৪৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। কেন্দ্র ছিল ১৫৭টি। মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ১১৬ জন। এই আসনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট হওয়ায় কোনো ভোট বাতিল হয়নি। আসনটিতে খুলনা ৬টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। নৌকা প্রতীকের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ১ লাখ ১২ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৭৭ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের নজরুল ইসলাম মঞ্জু ২৭ হাজার ৩৭৯ ভোট পেয়েছেন, যা মোট ভোটের ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ ছাড়া এই আসনে এইচ এম শাহাদাৎ কাস্তে প্রতীকে ১ হাজার ১৬, এস এম সোহাগ টেলিভিশন প্রতীকে ১৫০, কে এম ইদ্রিস আলী গোলাপ ফুল প্রতীকে ৩৮৪, মনিরা বেগম মাছ প্রতীকে ১৭৬ এবং হাতপাখা প্রতীকে মো. আব্দুল আউয়াল ৪ হাজার ১৫ ভোট পান।

খুলনা-৩ আসনে (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) মোট ১১৭টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মোট ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪৯ ভোট পড়েছে। বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৬১৬ ভোট।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রকিবুল ইসলাম বকুল ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬০৬ ভোট (১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ)। এ ছাড়া মই প্রতীকে জনার্দন দত্ত ২৫৪, হাতপাখা প্রতীকে মো. মুজ্জাম্মিল হক ৬ হাজার ৮৭২, গোলাপ ফুল প্রতীকের এস এম সাব্বির হোসেন ১৯৫ ভোট পেয়েছেন। ভোট গ্রহণের দিন দুপুরের আগেই বিএনপির রকিবুল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) ৭৯ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই আসনের ১৩১টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৭৬ জন। তাঁর মধ্যে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬৪ ভোট পড়েছে। বাতিল ভোটের সংখ্যা ১ হাজার ৭৫৩।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩১১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন (৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আজিজুল বারী হেলাল পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৮৭ ভোট (৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ)। তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আসনে কোদাল প্রতীকে কে এম আলী দাদ ২৬৩, হাতপাখা প্রতীকে ইউনুস আহম্মেদ শেখ ৭ হাজার ১২৫, গোলাপ ফুল প্রতীকের শেখ আনছার আলী ৫২৭ এবং টেলিভিশন প্রতীকের শেখ হাবিবুর রহমান ২৯৮ ভোট পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী দুপুরের আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) ৭৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই আসনের ১৩৩টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭০ জন। তাঁদের মধ্যে ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৩ ভোট পড়েছে। ২ হাজার ১০১ ভোট বাতিল হয়েছে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজার ৭১৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৮৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের মিয়া গোলাম পরওয়ার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯৫৯ ভোট (১২ দশমিক ২১ শতাংশ)।

এ ছাড়া এই আসনে কাস্তে প্রতীকে চিত্ত রঞ্জন গোলদার ৪৯৬, লাঙ্গল প্রতীকের মো. শাহীদ আলম ৬২৭ ও হাতপাখা প্রতীকের শেখ মুজিবুর রহমান ৪ হাজার ১৩৩ ভোট পেয়েছেন। আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) ভোট পড়েছে ৮৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। ভোট পড়ার এ হার জেলার অন্যান্য আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ওই আসনের ১৪১টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৯ জন। তাঁর মধ্যে ৩ লাখ ১১ হাজার ৪৬০ ভোট পড়েছে। বাতিল ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৯২১।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৪৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৯২ দশমিক ১৬ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের আবুল কালাম আজাদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৫৭ ভোট। এর ফলে তাঁর জামানত বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

একই আসনের হাতপাখা প্রতীকে গাজী নূর আহমাদ ২ হাজার ২৫৭, গোলাপ ফুল প্রতীকের শেখ মর্তুজা আল মামুন ৩৩৪, কাস্তে প্রতীকের সুভাষ চন্দ্র সানা ৪৪২, টেলিভিশন প্রতীকের মির্জা গোলাম আজম ১৭২ ও লাঙ্গল প্রতীকের মো. শফিকুল ইসলাম ১ হাজার ৭২৮ ভোট পেয়েছেন। কারাগারে থাকায় ওই আসনের ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বেলা ১১টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। 

দুই নতুন মুখ

খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে ২ জন প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১ জন হলেন খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও অন্যজন হলেন খুলনা-৬ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান।