দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথ
ঘন কুয়াশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি বন্ধ, দুর্ভোগ

প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে দেশের অন্যতম প্রধান দুই নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি দিয়ে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পথে গত ১২ দিনে ৫০ ঘণ্টার মতো ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে প্রতিদিন টানা প্রায় নয় থেকে সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন রাতে নদী অববাহিকায় কুয়াশা পড়ায় ফেরি, লঞ্চসহ নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুই ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরিগুলো মাঝনদীতে রাতভর আটকে থাকছে। মাঝেমধ্যে হালকা কুয়াশায় নৌযান চলতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত মঙ্গলবার সকালে কুয়াশা কম দেখে দৌলতদিয়া থেকে ‘এমভি তিতাস’ নামের একটি লঞ্চ পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চটি দৌলতদিয়ার অ্যাপ্রোচ চ্যানেল পার হওয়ার সময় পেছন থেকে যাত্রীবোঝাই একটি ট্রলার সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি চ্যানেলেই ডুবে যায়।
কুয়াশার কারণে গত বুধবার রাত ১১টা থেকে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। এর আগে উভয় ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া রো রো ফেরি শাহ মখদুম, খান জাহান আলী ও শাহজালাল এবং কে টাইপ ফেরি কুমারী মাঝনদীতে আটকা পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল শুরু হয়। প্রায় আট ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আটকা পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। এদিকে দৌলতদিয়ায় যানজট কমাতে কর্তৃপক্ষ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ি আটকে থাকতে দেখা যায়।
দৌলতদিয়া নৌফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মামুন-অর রশিদ জানান, ঘাটের বেশি গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির সংখ্যা কমে এলে গোয়ালন্দ মোড় থেকে একসঙ্গে ২০-৩০টি করে গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ মো. নাসিম বলেন, ‘ঘাটে আটকে দুর্ভোগ কমাতে আমরা অধিক গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি বা পরিবহনগুলোকে যমুনা সেতু বা বিকল্প রুট ব্যবহারের কথা জানিয়েছি।’
শিমুলিয়াঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহব্যবস্থাপক চন্দ্রশেখর দাস বলেন, কুয়াশার কারণে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথ একটি অনিশ্চিত নৌপথে পরিণত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, গত রোববার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন সর্বনিম্ন নয় থেকে সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। গত বুধবার রাত আটটা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ফেরি বন্ধ ছিল। এ সময় মাঝনদীতে আটটি ফেরি নোঙর করে রাখতে হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত কয়েক দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের চরম কষ্ট স্বীকার করতে হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকচালকেরা পড়েছেন আরও বিপাকে। শিমুলিয়াঘাটের কাছে আটকে পড়া এমন ট্রাকের সংখ্যা হবে শতাধিক।
ঢাকা থেকে খুলনাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘গত সোমবার থেকে এখানে আছি। চার দিন হলো ফেরিতে উঠতে পারিনি।’
মাওয়াঘাটে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এস আই মো. ইউসুফ জানান, কুয়াশা বা যেকোনো দিনই শিমুলিয়াঘাটে রাতে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি দল সব সময় থাকে। এই কয়েক দিনের কুয়াশায় যাত্রীদের কাছ থেকে তেমন কোনো অভিযোগ তাঁরা পাননি।