ঘর ভেসেছে, ভেসেছে ছেলের পড়ার জন্য জমানো টাকাও

মোখলেছুরের বাড়ির জায়গাটি এখন ফাঁকা। পানি কমে যাওয়ায় শুধু ভিটের মাটিটুকু দেখা যাচ্ছে।ছবি: আনিস মাহমুদ

বন্যার পানি বাড়তে দেখে ১৫ জুন সন্ধ্যায় স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন মোখলেছুর রহমান। জিনিসপত্র কিছুই সঙ্গে নিতে পারেননি। পরদিন সকালে কিছু জিনিসপত্র সরাবেন ভেবে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাঁদের বাড়ি।

বাড়ির একটি ঘরে বাঁশের খুঁটিতে ছিদ্র করে ব্যাংকের মতো বানিয়ে সেখানে ছেলের পড়াশোনার জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন মোখলেছুর। সেটাও ভেসে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফুয়ার পড়ালেখার লাগি বাঁশের খুঁটার মাঝে দেড় বছর থাকি টেখা জমাইছিলাম। টেখা-পয়সাসহ বাঁশের খুঁটিটা পানিয়ে লইয়া গেছে গিয়া।’ মোখলেছুরের ছেলের নাম আমিনুর রহমান। সে শিশু শ্রেণির ছাত্র।

মোখলেছুর রহমানের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জের ভাটিপাড়া এলাকায়। তাঁদের বাড়িটি ছিল টিনের ছাউনির। বেড়াটাও ছিল টিনের। আর ঘরের খুঁটি ছিল বাঁশের।

বন্যার পানির স্রোতে বাড়ি ভেঙে গেছে। সঙ্গে ভেসে গেছে ভেতরে থাকা সব জিনিসপত্রও। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, যে স্থানে মোখলেছুরের বাড়ি ছিল, ওই জায়গাটি এখন ফাঁকা। পানি কমে যাওয়ায় শুধু ভিটের মাটিটুকু দেখা যাচ্ছে। তাতে পরে আছে কয়েকটি ইট।

দিনমজুর মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়িতে তিনটি ঘর ছিল। সঙ্গে ছিল একটি রান্নাঘর। ঘরের ভেতর ছিল তিনটি বিছানা, কাপড়ভর্তি দুটি আসবাব, কাঠের দুটি টেবিল, প্লাস্টিকের চারটি চেয়ার। রান্নাঘরে ছিল হাঁড়ি–পাতিল। সব ভেসে গেছে পানিতে। এ ছাড়া বন্যার এক সপ্তাহ আগে তিনি এক বস্তা চাল কিনেছিলেন। সেগুলোও ভেসে গেছে।

বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া ঘরের ছাউনির একটা অংশ ভিটে থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে পানিতে ডুবো ডুবো গাছের সঙ্গে আটকে আছে। আজ সকালে সেখানে পানির নিচে পাওয়া গেছে চারটি কলসি, কিছু কাপড়চোপড় ও তোশক।

মোখলেছুর বলেন, ‘পানির তলে ডুব দিয়া আতাইয়া বেশি কিচ্চু পাইসি না। অখন পর্যন্ত কয়েকটা কলস আর খেতা বালিস থোরা পাইসি।’

মোখলেছুরের পরিবার ১১ সদস্যের। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান ও ভাইবোনকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন তিনি। পানি নেমে গেলেও কোথায় থাকবেন, কী খাবেন—এ নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না তাঁর।