চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ইউজিসির নির্দেশনা না মেনে আবার নিয়োগ

বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কর্মকর্তাদের আত্মীয়সহ ২০ জনকে চলতি মে মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা না মেনে আবারও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এবার কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কর্মকর্তাদের আত্মীয়সহ ২০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি মে মাসে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংস্থাটি দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের অনুমতি ছাড়া অ্যাডহক, দৈনিকভিত্তিক জনবল ও মাস্টাররোলে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। উল্লেখিত ২০ পদে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির অনুমোদন নেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, উচ্চমান সহকারী, নিম্নমান সহকারী, প্রহরী ও ভোজনালয় (ডাইনিং) সহকারী পদে অন্তত ২০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রহরী আছেন ১১ জন, নিম্নমান সহকারী ৪ জন, উচ্চমান সহকারী ২ জন, ভোজনালয় সহকারী ২ জন ও অফিস পিয়ন একজন।

এসব পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। ফলে নিয়োগপ্রাপ্তরা কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা নিয়োগের বিষয়ে কীভাবে জানলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, প্রয়োজনের ভিত্তিতে ২০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য শিরীণ আখতারের বরাত দিয়ে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, জনবলসংকটের কারণে বিভিন্ন দপ্তরের কাজ স্থবির হয়ে পড়ছে। ইউজিসিকে জনবল নিয়োগের জন্য চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থবিরতা কাটাতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)

ইউজিসির রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিল আফরোজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ইউজিসির অনুমোদন না নিয়ে দৈনিক ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া পুরোপুরি বেআইনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটি পারে না। কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়োগের বিষয়ে জবাব চাওয়া হবে। আর সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারলে এসব নিয়োগের ফান্ড বন্ধ রাখা হবে।

ইউজিসিকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে দিল আফরোজ বলেন, শুধু চিঠি দিলেই হবে না। চিঠির সঙ্গে যাবতীয় তথ্য দিতে হবে, যেমন, কতজন কর্মরত আছেন, তাঁরা কত ঘণ্টা কাজ করছেন, কটি পদ খালি। এসব তথ্য না দিলে জনবল নিয়োগ কমিটির সভায় উঠবে না।

নিয়োগে ‘বিতর্ক’ পিছু ছাড়ছে না

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সেলের কর্মকর্তা সৈয়দ মনোয়ার আলীর ছেলেও এবার নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁর ছেলে সৈয়দ মাহফুজ মনোয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উচ্চমান সহকারী হিসেবে। দৈনিক ৫৫০ টাকা করে ৬ মাসের জন্য তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগের চিঠিতে সই রয়েছে সৈয়দ মনোয়ার আলীর। আছেন অফিসার সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দারের ভাতিজা আওসাফ হায়দার। তাঁকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে নিম্নমান সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে ‘বিতর্কিত’ নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের মে ও জুন মাসে বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই ১৫ কর্মকর্তা-কর্মাচারী এবং কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়া ১২ জনকে ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে এভাবে নিয়োগ দেওয়াকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছেন আইন অনুষদের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চাকরিবিধি ও সংবিধান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি ছাড়া জনবল নিয়োগের কোনো সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।