চট্টগ্রামে ছাদ থেকে পড়ে এক গৃহকর্মী নিহত অপরজন আহত

চট্টগ্রাম নগরের উত্তর খুলশীতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক গৃহপরিচারিকা নিহত এবং অপরজন গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। দুই গৃহপরিচারিকা ভবনের চারতলায় ব্যবসায়ী আহমেদ নবীর বাসায় কাজ করত। ঘটনার পর থেকে বাসায় তালাবদ্ধ করে বাসিন্দারা পালিয়েছে।
নিহত গৃহকর্মীর নাম দিলদার বেগম (১৬)। আহত অপরজনের নাম সানজিদা আক্তার (১৩)। দুই গৃহকর্মীকে ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে নাকি পালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেরা লাফ দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে পরিবারের অভিযোগ, তাদের নির্যাতন করা হতো।
আহত সানজিদার ভাই মো. ইউনুছ বলেন, ‘মাত্র ২০-২৫ দিন আগে শাহ আমিন গ্রুপের মালিক আহমেদ নবীর খুলশীর বাসায় কাজে যোগ দেয় আমার বোন ও দিলদার। এর পর থেকে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছিল বলে আমাদের ফোনে জানাত। সর্বশেষ পাঁচ দিন আগে তাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোনে জানায়। কিন্তু পরে ফোনটি কেড়ে নেওয়ায় আর কথা হয়নি।’
হতাহত দুজনই কক্সবাজারের টেকনাফের লেদা এলাকার বাসিন্দা। সানজিদার পরিবার লেদা শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করে। তার বাবার নাম মো. ইদ্রিস। দিলদারের বাবা দীন মোহাম্মদ লেদা গ্রামে বসবাস করেন।
ঘটনার পর দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা দিলদারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত সানজিদা নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছে না। সহযোগী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, তার মুখের চোয়াল ভেঙে গেছে। এ ছাড়া মাথা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাত রয়েছে। তবে অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুই গৃহকর্মীকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। বাসার লোকজন তালা মেরে চলে যেত। গতকাল ঘটনার সময় বাসায় আহমেদ নবীর দুই মেয়ে বাসায় ছিলেন। দুই গৃহকর্মী নিচে পড়ে যাওয়ার পর তাঁরা বাসায় তালা বন্ধ করে পালিয়ে যান। তাঁদের একটি গাড়ি দিয়ে দুই গৃহকর্মীকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন আরিফ নামে একজনকে আটক করা হয়। হাসপাতালে প্রথমে দুজনের ভুল নাম দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাস্থল খুলশি ৬ নম্বর সড়কের কিংস প্যালেস নামে সাততলা ভবনটির দারোয়ান তাজুল ইসলাম জানান, ছোট মেয়েটি (সানজিদা) টিনের ছাদের ওপর পড়ে। অন্য মেয়েটি রাস্তায় পড়ে। দুই মেয়েকে কখনো নিচে তিনি দেখেননি বলে জানান।
একই ভবনের ক্লিনার আবু তাহের বলেন, সকালে ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়েছিল ছোট মেয়েটি। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাটি ঘটে।
খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউছার আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘কী কারণে তারা নিচে পড়ে গেল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে চারতলার আহমেদ নবীর বাসা তালাবদ্ধ রয়েছে। এখন তাদের ফেলে দেওয়া হয়েছে, নাকি নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাঁচতে তারা লাফ দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখছি।’
এ ব্যাপারে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও আহমেদ নবীর ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।