চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫৫০০ কোটির প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অজানা

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার এ সমস্যা অনেক দিন ধরে সমাধান হয় না। ফাইল ছবি
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার এ সমস্যা অনেক দিন ধরে সমাধান হয় না। ফাইল ছবি

গত শনিবার এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর এত দুর্দশা যে এরপরের অবস্থা কি হবে, চিন্তা তা নিয়েই। ২০১৫-এক কর্তাব্যক্তি বললেন, তিন বছরের মধ্যে এর সমাধান। আর একজন বললেন, জলাবদ্ধতা তো আমার দায়িত্ব নয়, এটা নিরসন ওয়াসা করবে ।

২০১৭ সালে ৫ হাজার ৫০০ কোটি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তা ব্যক্তিদের নির্দেশ দিলেন, তিন বছরের মধ্যে এ অবস্থার সমাধান করেন। তাঁর ইচ্ছায় কাজের নেতৃত্ব চলে গেল চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সেনাবাহিনীর কাছে।

সিডিএ চেয়ারম্যান (আবদুচ ছালাম ২০১৯ সালে ২৩ এপ্রিল অবসরে যান) গত বছর বললেন, মাফ চাই, এবার নয়, কিন্তু আগামী বছর বিশাল সফলতা দেখবেন। নতুন সিডিএ চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম জহিরুল আলম দোভাষ কয়দিন আগে বললেন, সমাধানে সময় লাগবে আরও কয়েক বছর, নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারলেন না, মনে হচ্ছিল তিনি প্রকল্প ভালো করে এখনো পড়েননি বা জানেন না। আর কয়দিন পরেই তিনি বললেন, কাজের দায়িত্বটা সিডিএকে দেওয়া ঠিক হয়নি। তার মানে উনি কি বোঝাতে চাইলেন যে, দায়িত্ব ভাগ ঠিক হয়নি। ওনার উচিত ছিল বরং বুঝে কথা বলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০০% বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করা আর কাউকে খুশি না করে সমন্বয়ের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে যথাযথভাবে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে যথাশিগগিরই নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়া। ওনার বাড়িতে কখনো পানি ওঠেনি বলেই মনে হচ্ছে ৪০ লাখ নগরবাসীর চরম দুঃখ দুর্দশার কথা যথেষ্টভাবে অনুধাবন করতে পারেননি বলেই উনি কিছুটা না বুঝে মন্তব্য করেছেন। তবে সম্প্রীতি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের রিজিওনাল প্রধানের কথার কয়েকটা দিক ভালো লেগেছে। যেমন, তিনি বলেছেন, জলাবদ্ধতার সময়কালে তাঁর টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন (স্পট ভিজিট) করে যে সব স্থানে পানির চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে সেগুলি চিহ্নিত করে জরুরি ব্যবস্থা নেবেন। আমরা যারা এই বিষয়ে সোচ্চার রয়েছি তারা সব সময় বলেছি এর প্রয়োজনীয়তা, কিন্তু অতীতে কেউ এটিকে গুরুত্ব দেননি। নগরবাসীর একটা মতো হচ্ছ, কেও যদি এই প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে বেশ উৎসাহী না বোধ করেন, তাহলে সম্পূর্ণ দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দিতে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। তাদের লোকবল আছে এবং তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো দ্রুত এবং দুর্নীতি মুক্ত থেকে কাজ করতে পারবেন নিঃসন্দেহে। শুধু সেনাবাহিনীকে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে যাবেন। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টা ঠিক করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেই করুক না কেন, নগরবাসী সমাধান দেখতে চান।

তবে, উপরিউক্ত ঘটনাবলি থেকে মনে হচ্ছে প্রকল্প নিয়ে একটা বিশাল নাটক চলছে আর তার সঙ্গে আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু বলে চলছে নগরবাসীর সঙ্গে প্রহসন ও তামাশা। আল্লার ওয়াস্তে সংশ্লিষ্ট সবাই বিশ্বস্ততার সঙ্গে উদ্যোগী হয়ে, রাজনীতির মারপ্যাঁচ বাদ দিয়ে কাজে নেমে পড়লে অবশ্যই আমরা সমাধান দেখব। 

*ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমাধান আন্দোলনের উদ্যোক্তা