চট্টগ্রামে ২৫ ও ২৬ মার্চ হত্যাকাণ্ড চালায় জিয়া: প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনায় সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় ‘মুক্তির ডাক’ স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও বক্তৃতা করেন তিনি। ঢাকা, ৮ মার্চ
ছবি: পিআইডি

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হামলা ঠেকাতে দেশের মানুষ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সারা দেশে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামে যারা রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছিল, তার মধ্যে জিয়াউর রহমান একজন। সেদিন জিয়া অনেককে গুলি করে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, ২৫ ও ২৬ মার্চ এ দুদিনই হত্যাকাণ্ড চালায় জিয়াউর রহমান।


রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আজ সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনায় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজেও এই বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।


মুক্তিযুদ্ধের শুরুর সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা করে। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুতি নাও। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দাও। সারা বাংলাদেশেই ব্যারিকেড দিচ্ছিল। কারণ, পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করবে সবাই তা জানত। ঢাকাও ব্যারিকেড দিয়েছিল। চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল ২৫ মার্চ, তাদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছিল, তার মধ্যে জিয়াউর রহমান একজন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে বাঙালি যারা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিল, জাতির পিতার নির্দেশে যারা সেদিন রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিল, তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে। চট্টগ্রামের যারা মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে এ তথ্য পাওয়া যাবে। তারা দেশেও আছে, বিদেশেও অনেকে আছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘শুধুই তাই নয়, জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ দুই দিনই এ হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৭ তারিখে সে যাচ্ছিল সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে। এ অস্ত্র যাতে না নামায়, সেখানে কিন্তু আমাদের সংগ্রাম পরিষদের তারা বাধা দিয়েছিল। ছাত্ররা, সাধারণ জনগণ সেখানে বাধা দিয়েছিল। সেখানেই তারা জিয়াউর রহমানকে আটকায়, যাতে জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে না পারে। ২৭ তারিখ পর্যন্ত সে তাদের হাতেই ছিল। যারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সাধারণ জনগণের ওপর গণহত্যা শুরু করেছে। গণহত্যা শুরু করার পর জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে যাচ্ছে। যে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। অবৈধ ক্ষমতায় বসে দল গঠন করে।’


বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে যে জিয়া, তার দলের নেতারা ৭ মার্চের ভাষণের ভাষা, মর্ম বুঝবে না—এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। ধরে নিতে হবে তারা তাদের পুরোনো প্রভুদের ভোলেনি। তাদের পালিত ‘সারমেয়’ দল হিসেবে তারা এখনো আছে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) কিছু জানে না, বোঝে না। ৭ মার্চের ভাষণে কিছু খুঁজে পায় না। তারা এখন এ দিবসটি উদ্‌যাপন করতে গেছে। অথচ তারাই এটি নিষিদ্ধ করেছে, যেটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদা পেয়েছে। নির্বোধরা এটি বোঝেনি। বুঝেছিল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল। এটাই বাস্তবতা।


জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাসংক্রান্ত বিতর্কের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা বললেন একজন সেনাবাহিনীর কাউকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হলে ভালো হয়। এতে যুদ্ধ-যুদ্ধ মনে হবে। তখন মেজর রফিককে পাঠ করতে বলা হয়। কিন্তু তখন অ্যামবুশ করে বসে ছিলেন। তিনি সরলে পাকিস্তানিরা ওই এলাকা দখল নেবে। তখন জিয়াউর রহমানকে ধরে আনা হয় ঘোষণা পাঠের জন্য। জিয়াউর রহমান তখন জনগণের হাতে ধরা ছিল। তাকেই আনা হয়। আর এখন তারা (বিএনপি) জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে প্রচার করে। অথচ ভুলে যায় জিয়ার ২৫-২৬ মার্চের হত্যাকাণ্ডের কথা।  


প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (জিয়াউর রহমান) আগাগোড়া পাকিস্তানের দালালি করে আসছে। তার জন্মও সেখানে। লেখাপড়াও ওখানে। সে কবে বাংলাদেশের হলো? চাকরিসূত্রে এখানে এসেছে। সে সূত্রে বিবাহ হয়ে পরে এখানে থেকে যায়। এই তো বাস্তবতা। তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তাদের সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেইমানি, মোনাফেকি করেছে। বঙ্গবন্ধু তাকে (জিয়াকে) মেজর জেনারেল করেছিলেন। সে (জিয়া) এ হত্যাকাণ্ডের (১৫ আগস্ট) মূল হোতা ছিল এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। যারা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে, দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, এ দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী আশা করবে?


শেখ হাসিনা বলেন, ইউনেসকো ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তারা এ ভাষণ জাতিসংঘের সব ভাষায় প্রচার ও প্রসার করছে। নিউজউইক জাতির পিতাকে বলেছে রাজনীতির কবি। ৭ মার্চের ভাষণে একটি পূর্ণাঙ্গ গেরিলাযুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। একেকটা লাইন একেকটা নির্দেশনা। এটিই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ আরও একজন বোঝেননি। তিনি বাংলাদেশের লোক। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সিরাজুল আলম খান। এই ব্যক্তি সেদিনের ভাষণের পর আমাদের বাসায় গেলেন। সেখানে ছাত্রলীগের সাবেক ও সেই সময়ের নেতারাও ছিলেন। সিরাজুল আলম বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “লিডার, আপনি কী বললেন, সব মানুষ হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে।” সেখানে আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদসহ অনেকে ছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম, এত মিথ্যা কথা বলেন কেন? মানুষ তো খুশিতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে একসঙ্গে স্লোগান দিচ্ছে। মানুষ খইয়ের মতো ফুটছে। আব্বাকে বললাম, এদের কথা বিশ্বাস করবেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, দক্ষ রণকৌশলী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতিকে বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে দেশ উন্নত দেশ হতো।

 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়ন করেছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এটা তাদের একটুও পছন্দ না। আমি আমাদের নেতা–কর্মীদের বলব, ওরা কী বলল, এটা নিয়ে কথা বলার দরকার নেই, চিন্তা করার দরকার নেই। করোনা নিয় তারা কত কথা বলেছে, কিন্তু টিকা তো তাদের নিতে হলো। আমি সরকারে আছি, পয়সা দিয়ে টিকা কিনে বিনা পয়সায় দিচ্ছি। বিনা পয়সার টিকা তো বিএনপি নেতারা নিয়েছে। এর আগে কী বলেছে? এ জন্য তারা কী বলল তা দেখার দরকার নেই।’