চট্টগ্রামের নির্বাচনী পোস্টার দিয়ে বানানো হবে খাতা, ঠোঙা

নগরের বিভিন্ন সড়কে লাগানো পোস্টার পরিষ্কার করছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। এই পোস্টার দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তৈরি করা হবে খাতা। চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

শহর ছেয়ে গেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন উপলক্ষে বানানো প্রার্থীদের পোস্টারে। অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক—সব জায়গায় পোস্টার-লিফলেট । মাথার ওপর তাকালে এসব পোস্টার ছাপিয়ে সুনীল আকাশ দেখাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই পোস্টার বা লিফলেট ময়লার ভাগাড়ে না ফেলে এর ভিন্ন ব্যবহার করতে মাঠে নেমেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম নগরের জামালখান, পাহাড়তলী, চেরাগীর মোড়, সাগরিকা, উত্তর কাট্টলিসহ একাধিক এলাকার নির্বাচনী পোস্টার সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সারা দিন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে এসব পোস্টার-লিফলেট সংগ্রহ করেছেন। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার পোস্টার সংগ্রহ করেন তাঁরা। রাতেও চলবে তাঁদের কার্যক্রম। এ ছাড়া কাল শুক্রবারও নগরের অলিগলিতে স্বেচ্ছাসেবকেরা পোস্টার সংগ্রহের কাজ করবেন।

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে এসব পোস্টার-লিফলেট সংগ্রহ করেছেন।নগরের জামালখান এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন, এসব পোস্টার-লিফলেট খাতা, ঠোঙা ও প্যাকেট বানানোর কাজে ব্যবহার করা হবে।

বিদ্যানন্দের যোগাযোগপ্রধান সালমান খান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব পোস্টারের এক পৃষ্টায় নকশা বা প্রিন্ট করা, সেগুলো দিয়ে খাতা তৈরি করা হবে। আবার দুই পাশেই প্রিন্ট করা পোস্টার দিয়ে ঠোঙা তৈরি করা হবে। আর রশিগুলো দুর্গম এলাকার মাচাং ঘর বানাতে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ব্যানার দিয়ে রেইনকোট ও স্কুলব্যাগ তৈরি হবে। অন্যান্য নষ্ট কাগজ জ্বালানি হিসেবে এক টাকায় আহার প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।

সালমান খান বলেন, নির্বাচনের আগে পুরো শহরে হাজার হাজার পোস্টার টাঙানো হয়েছে। এখন নির্বাচন শেষ। এসব পোস্টার-লিফলেট আর দরকার নেই। তাই পোস্টারগুলো কাজে লাগাতে স্বেচ্ছাসেবকেরা মাঠে নেমেছেন। তিনি জানান, বিদ্যানন্দের প্রায় দুই ডজন প্রকল্প রয়েছে। আর বিদ্যানন্দ শিশু নিকেতনে সারা দেশে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দেখি প্রিয় শহর ঢেকে গিয়েছে পোস্টারে। তখন চিন্তা করি নির্বাচন শেষে শহরকে পরিষ্কার করতে হবে। পোস্টারগুলো কাজে লাগাতে হবে। বিদ্যানন্দও একই চিন্তা করল। তাই তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।’

এসব পোস্টার-লিফলেট খাতা, ঠোঙা ও প্যাকেট বানানোর কাজে ব্যবহার করা হবে
ছবি: সংগৃহীত

আরেক স্বেচ্ছাসেবক আমেনা পিহু বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব পোস্টার সংগ্রহ করে আবর্জনা হিসেবে হয়তো পুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু বিদ্যানন্দ এসব পোস্টার সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজে লাগাবে। তাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কাজ করতে পারা সত্যিই আনন্দের।

পোস্টার সংগ্রহ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেওয়া কিশোর কুমার বলেন, তাঁদের পক্ষে সব পোস্টার সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তাঁরা এ বার্তা দিতে চান যে এভাবে অপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। মানুষের কাজে লাগানো যায়।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। তবে ভোটারের উপস্থিতি তেমন ছিল না।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।