চতুর্থ দফায় আরও ৩৬০০ রোহিঙ্গা যাচ্ছে ভাসানচরে

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর
এএফপি ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবির থেকে চতুর্থ দফায় নোয়াখালীর ভাসানচর যাচ্ছে আরও অন্তত ৩ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা। আজ রোববার দুপুরে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে প্রথমে প্রায় ২ হাজার এবং পরের দিন সোমবার আরও ১ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন পরিবহনে চট্টগ্রাম পাঠানো হবে। সেখান থেকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে নেওয়া হবে।

স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক এমন প্রায় ২৩ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্য থেকে চতুর্থ দফায় স্থানান্তরের জন্য প্রায় ৪ হাজার জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন তাদের ক্যাম্প থেকে ট্রাকে তুলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি কার্লয়) উপসচিব মোহাম্মদ সামছুদ-দ্দৌজা প্রথম আলোকে বলেন, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি চতুর্থ দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো করা হচ্ছে।

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, এর আগে তিন দফায় কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৮ জন রোহিঙ্গাকে। এর মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় স্থানান্তর করা হয় ১ হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় ১ হাজার ৮০৪ জন, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় স্থানান্তর করা হয়েছে ৩ হাজার ২৪২ জনকে। ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে মোট ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

গতকাল টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাঁচটি বাসে করে রোহিঙ্গাদের একটি দলকে উখিয়ায় নেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে টেকনাফের মেরিনড্রাইভ সড়ক থেকে বাসে ওঠার সময় রোহিঙ্গাদের বিদায় জানাতে এসেছিলেন তাঁদের বন্ধু ও স্বজনেরা। বাসে ওঠার আগে রোহিঙ্গা মো. শফিক (৪৫) প্রথম আলোকে বলেন, ভাসানচরে আগে যারা (রোহিঙ্গা) গেছে তারা সবাই ভালো আছে, নিরাপদে আছে—এমন খবর জানার পর তাঁরাও ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জালাল আহমদ বলেন, আশ্রয়শিবিরগুলো বেশির ভাগ পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি। বর্ষার সময় পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি বিলীন হয়। আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটের উৎপাত বেড়েছে। সম্প্রতি দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের মধ্যে গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।