চার লেনের জন্য অপেক্ষা, ভোগান্তি

শীত ও গ্রীষ্মে সড়কজুড়ে ধুলাবালু ওড়াউড়ি করে আর বর্ষায় সড়ক হয়ে ওঠে কাদাময়।

বড় বড় গর্ত, কোথাও খানাখন্দ। ধুলাবালুর মধ্যেই চলাচল করছে মানুষ। গত মঙ্গলবার কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কংসনগর বাজারে।
ছবি: এম সাদেক

কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও ছোট–বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও সড়ক দেবে গেছে, কোথাও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। শীত ও গ্রীষ্মে সড়কজুড়ে ধুলাবালু ওড়াউড়ি করে আর বর্ষায় সড়ক হয়ে ওঠে কাদাময়।

কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ৪০ কিলোমিটার এলাকার বেশির ভাগেই এ অবস্থা। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে যানবাহন বিকল হয়ে প্রায়ই যানজট লেগেই থাকে। ভোগান্তি নিয়েই মানুষ গন্তব্যে পৌঁছায়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) কুমিল্লার প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এই মহাসড়ক ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে চার লেনে উন্নীত করার জন্য ৭ হাজার ৪১৬ কোটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে বিচ্ছিন্নভাবে সংস্কারকাজ চলছে। সংস্কারকাজ ও সড়কের প্রস্থ কম হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির প্রস্থ ১৮ ফুট। এর মধ্যে কুমিল্লা অংশে ৪০ কিলোমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ৪২ কিলোমিটার। ২০১৫ সালে ভারত এই মহাসড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মালামাল পরিবহনের উদ্যোগ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার এলাকা চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি তৃতীয় ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের (ভারত ঋণ চুক্তি-৩) অর্থায়নে করার আলোচনা শুরু হয়। এ জন্য ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দেশ ৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা তৈরি করে। এতে ভারত ২ হাজার ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ এবং বাংলাদেশ ৪ হাজার ৬৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেবে। তবে চার লেন সড়কের মালামাল কেনাকাটার ৬৫ শতাংশ করতে হবে ভারত থেকে। তখন বলা হয়েছিল, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। ফলে এই মহাসড়ক নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সওজের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। চার লেনের আশায় বসে থাকতে থাকতে পাঁচ বছর ধরে ওই মহাসড়কে দফায় দফায় সংস্কারকাজ করেও সড়ক টেকানো যাচ্ছে না। ভারী যানবাহন ও মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের কারণে মহাসড়কে ভোগান্তি বাড়ছে।

সওজের অন্তত তিন প্রকৌশলী জানান, দেশ ভাগের সময় এই সড়কে প্রথমে ইট বসানো হয়। পরে পর্যায়ক্রমে ইটের ওপর কার্পেটিং করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে কার্পেটিংয়ের স্তর উঁচু করা হয়। কিন্তু সড়কের কাঠামো না থাকায় উন্নয়নকাজ টেকে না।

সরেজমিন গত মঙ্গলবার দুপুরে ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার দেবপুর এলাকার সড়কের আরসিসি ঢালাই অংশ ভেঙে গেছে। কংশনগর এলাকায় খানাখন্দ। দেবীদ্বারের বারেরা এলাকায় ব্র্যাক অফিসের সামনের অংশ খানাখন্দে ভরা। একই এলাকায় সড়কের মধ্যে কাদা জমে আছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গেছে। দেবীদ্বার পৌরসভার নিউমার্কেট এলাকায় আরসিসি ঢালাই ভেঙে গেছে। দেবীদ্বার থানা ফটক থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত ছয়টি অংশের ঢালাই ভেঙে ইট–সুরকি ও রড বের হয়ে গেছে। ওই কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

যাত্রীবাহী বাস কুমিল্লা ট্রান্সপোর্টের চালক মো. শামীম বলেন, ‘জান বাজি রেখে বাস নিয়ে যাওয়া–আসা করি। কিন্তু সড়ক ঠিক হচ্ছে না।’

২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে বুড়িচং উপজেলার দেবপুর, কংশনগর, দেবীদ্বার উপজেলার বারেরা, দেবীদ্বার পৌর এলাকা ও মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ এলাকার ২২ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ চলছে। একেকটি অংশ ঢালাই দেওয়ার পর অন্তত ২৮ দিন যান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু ১৮ ফুট প্রস্থ সড়কের একপাশের ৯ ফুট বন্ধ থাকলে পুরো সড়কের মধ্যে যানজট লেগে থাকে। ওই কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ওই কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে আবার সংস্কার করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

দেবীদ্বারের বাসিন্দা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি এ বি এম আতিকুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। চার লেন করে প্রস্থ বাড়িয়ে দুর্ভোগ কমাতে হবে। অন্যথায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে বসে থাকতে হবে।

সওজ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাফরুল হায়দার বলেন, নতুন করে ভেঙে যাওয়া অংশে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। সেটি করা হলে আপাতত ভোগান্তি হবে না।

সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঋণচুক্তির আওতায় এই মহাসড়ক চার লেন করা হবে। এটি নিয়ে এত দিন চিঠি চালাচালি হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে। এখন বিভাগীয়ভাবে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে।