চার সংগঠনের নতুন জোট গঠন

গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের যৌথ সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদ—এই চার সংগঠন মিলে নতুন একটি জোট গঠন করেছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন চারটি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা ঘোষণা দেয়।

আলোচিত দুই সহোদর হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের সাজা মওকুফ নিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘এই রাষ্ট্র এখনো পাকিস্তানি বা ঔপনিবেশিক আইন অনুযায়ী চলছে। সরকার যে আসলে তাদের ক্ষমা করতে পারে, এই আইন আসলে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারার মধ্যে দেওয়া আছে। এটা পাকিস্তান আমলে দেওয়া ছিল। দণ্ডবিধি ব্রিটিশ আমলের। সরকারের চোখে যারা প্রিয়, তারা আইনের চোখে দোষী হলেও নির্দোষ। এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্যই মানুষের যুদ্ধ করতে হয়েছিল।’ এ ধরনের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য চার সংগঠন একত্র হয়েছে বলে জানান হাসনাত কাইয়ুম।

বাংলাদেশ নিয়ে আল-জাজিরার করা প্রতিবেদনের বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে সংবাদমাধ্যমও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিদেশি গণমাধ্যম থেকে জানতে হয়। বিদেশি গণমাধ্যম যখন মাফিয়া রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে, তা গৌরবের নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিদিন নাগরিককে অপমান করে। একটা কার্টুন আঁকার জন্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষমতায় যাঁরা আসীন আছেন, তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। গুন্ডাতন্ত্র কায়েম হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা হচ্ছে
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ একটি মীমাংসিত বিষয়। সেটাকে এখন বিতর্কিত করা হচ্ছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাজাহান খান, তাঁর কাজকর্ম সম্পর্কে দেশের মানুষ ভালোভাবেই জানে। এই ৫০ বছরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এখনো নির্ভুল একটি তালিকা তৈরি করতে পারেনি। এই লজ্জা আওয়ামী লীগকে নিতে হবে, কারণ তারাই দাবি করে তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল প্রসঙ্গে নুরুল বলেন, ‘কারও খেতাব বাতিলের এখতিয়ার জামুকার নেই। সেটা থাকলে ছিল বঙ্গবন্ধুর, তখনকার সেক্টর কমান্ডারদের। আন্তর্জাতিকভাবে যখন সরকারের চেহারা উন্মোচন হয়েছে, তা ঢাকার জন্য জিয়াউর রহমানের খেতাব প্রসঙ্গ উঠল। বীর উত্তম কি মামুর বাড়ির মোয়া? চাইলেই পাওয়া যায়? এটা সংকীর্ণতার রাজনীতি।’

খেতাব বাতিল নিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ যদি মনে করে জিয়াউর রহমানের পরবর্তী ভূমিকার জন্য খেতাব কেড়ে নেওয়া যায় এবং পরবর্তী সময়ে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগেরও অনেকের খেতাব কেড়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এখানে একটা সীমারেখা টানতে হবে।’

চার সংগঠনের নতুন জোট
গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদ একসঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই চারটি সংগঠন গণমানুষের রাজনীতি গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। গণমানুষের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে চাই। চারটি সংগঠনের একত্র হওয়ার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করাই এখন লক্ষ্য।’

রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ুম বলেন, শাসনব্যবস্থার সংস্কার দরকার বলে মনে করে এই চার সংগঠন। সেখান থেকে এক হয়েছে। যাঁরা তাঁদের সঙ্গে একমত হবেন, তাঁরাও এখানে আসবেন।

নুরুল হক বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে একটি উদ্যোগ নিয়েছি। আওয়ামী লীগ বিএনপি কী করবে, তা দিয়ে দেশ চলবে না। স্বাধীনতার লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে যে রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল, তা হয়নি। আমাদের এখন বড় ভূমিকা রাখার সময় এসেছে।’

এই চার সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, ১২ মার্চ সমাবেশ, ২৬ মার্চ নিজ নিজ সংগঠনের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস পালন এবং ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস উদ্‌যাপনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।