গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় মৌলভীবাজারের চা-বাগানের কারখানাগুলোতে ইঞ্জিন সচল রাখা যাচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় উত্তোলিত কাঁচা চা-পাতার বেশির ভাগ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চা-বাগানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশের চা সংসদ সিলেট শাখা সূত্র জানায়, গত জুন থেকে জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। এরপর থেকে চা-বাগান কারখানার দুটি ইঞ্জিন একসঙ্গে চালু রাখা যাচ্ছে না। তাই কমলগঞ্জের ২২টিসহ জেলার ৯২টি চা-বাগানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উত্তোলিত চা-পাতা পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সংগঠনটির সিলেট শাখার সভাপতি জি এম শিবলী বলেন, গ্যাসের চাপ কমে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি কোম্পানির ব্যবস্থাপকের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরপরও গ্যাসের চাপ বাড়েনি।
বিভিন্ন চা-কারখানা সূত্রে জানা যায়, উত্তোলিত কাঁচা চা-পাতা প্রথমে গ্যাস ব্যবহার করে বড় আকারের বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে ধূপকরণ করে নিতে হয়। পরে ধূপকরণ করা কাঁচা চা-পাতা মূল কারখানায় নিয়ে কাটিং পদ্ধতিতে উৎপাদন পর্যায়ে নিতে হয়। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় ধূপকরণ ব্যাহত হচ্ছে। তাই বেশির ভাগ চা-বাগানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার কেজি কাঁচা পাতা নষ্ট হচ্ছে।
গত বুধবার এই প্রতিবেদক কমলগঞ্জের পাত্রখোলা, ফুলবাড়ি ও কুলাউড়ার চাতলাপুর চা-বাগান কারখানা ঘুরে দেখেন। এ সময় পাত্রখোলা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম, ফুলবাড়ি চা-বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার রহমান ও চাতলাপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার মাহমুদ বলেন, প্রতিটি চা-বাগান কারখানার দুটি ইঞ্জিন চালাতে গ্যাসের চাপ ২২ পিএসআই (প্রেশার পার স্কয়ার ইঞ্চি) প্রয়োজন। এর বিপরীতে ওই দিন তাঁদের কারখানায় চাপ ছিল ৭ পিএসআই। এ অবস্থায় একটি ইঞ্জিন বন্ধ রেখে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো রকমে একটি ইঞ্জিন চালু রাখা হচ্ছে। এ কারণে উৎপাদনের দৈনিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার কেজি। উৎপাদিত হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার কেজি।
চা-বাগানের কর্মকর্তারা আরও বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকায় কারখানার দুটি ইঞ্জিনই বন্ধ রাখতে হয়েছিল। গ্যাসের চাপ ২২ পিএসআই থাকলে কারখানার দুটি ইঞ্জিন চালু রাখা যায়। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় কম। বিলও আসে কম। গ্যাসের চাপ কম থাকলে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা বাড়ে, বিদ্যুৎ বিলও বেড়ে যায়।
চাতলাপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার মাহমুদ তাঁর কার্যালয়ের নথি দেখিয়ে বলেন, কারখানার দুই ইঞ্জিন চালু রাখা অবস্থায় মে মাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আর আগস্টে গ্যাসের চাপ কম থাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে যায়। এতে বিদ্যুৎ বিল আসে ছয় লাখ টাকা।
বুধবার বড়লেখা উপজেলার কেরামত নগর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মারুফ আহমেদ, রাজনগর উপজেলার রাজনগর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক জি এম শিবলীসহ জেলার অন্তত ১০টি বাগানের ব্যবস্থাপকেরা গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি শাহজীবাজারে ৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিধি লঙ্ঘন করে পূর্ব-সমীক্ষা ছাড়াই ওই কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ কাজ করেন।
কোম্পানির ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান মুঠোফোনে বলেন, আসলে শাহজীবাজার গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র থেকে আগের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না। দুই মাস ধরে গ্যাস সরবরাহ ১০০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় কারখানা, গ্যাস ফিলিং স্টেশন ও বাসাবাড়িতেও ঠিকভাবে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।