চিকিৎসক-সংকট, রোগীদের ভোগান্তি

৩ জুলাই। বেলা সাড়ে ১১টা। ঘটনাস্থল পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বহির্বিভাগের বারান্দাজুড়ে শতাধিক রোগী। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন কখন ডাক আসবে চিকিৎসকের কক্ষ থেকে। চিকিৎসকও মাত্র একজন। সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। রোগীরাও বিরক্ত।
পটিয়ার পাঁচুরিয়া গ্রাম থেকে আসা ৯০ বছর বয়সী শ্বাসকষ্টের রোগী পুষ্প রানী বড়ুয়ার মেয়ে লতিকা বড়ুয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেড় ঘণ্টার বেশি হয়েছে হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখনো ডাক্তার দেখানোর সুযোগ পাচ্ছি না। মা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’ একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অন্য রোগীরা।
সরেজমিনে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসক-সংকটের এই চিত্র পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দিন হাসপাতালের জরুরি, অন্ত ও বহির্বিভাগে মাত্র তিনজন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। একই দিন ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত আছেন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দুলাল প্রসাদ ভট্টাচার্য্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গেছেন দাপ্তরিক কাজে। অপর দুই চিকিৎসকের মধ্যে একজন আগের দিন সকালে এবং আরেকজন রাতে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করায় তাঁরা ছিলেন বিশ্রামে।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ পদ রয়েছে ২১টি। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও জুনিয়র কনসালট্যান্টের নয়টি পদ খালি রয়েছে। কর্মরত ১২ জনের মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) দুই মাসের, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ৭ জুলাই পর্যন্ত ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন) এক দিনের ছুটিতে রয়েছেন। কর্মরতদের মধ্যে চিকিৎসা কর্মকর্তা সুপ্রিয় কর্মকার সপ্তাহের মধ্যে প্রতি বৃহস্পতিবার পটিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করলেও বাকি ছয় দিন কাজ করেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। আরেক চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহ মঈন উদ্দিন চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি পাঁচ দিনের নৈমিক্তিক ছুটি নিয়ে দেড় বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এদিকে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ছয় মাস, জুনিয়র কনসালট্যান্টদের মধ্যে (সার্জারি) তিন বছর, অবেদনবিদ তিন বছর, কার্ডিওলজিস্ট এক বছর, অর্থোপেডিক এক বছর, নাক-কান-গলা (ইএনটি) এক বছর, চক্ষু ও সহকারী সার্জন (প্যাথলজিস্ট) শুরু থেকেই এবং অন্তর্বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ এক বছর ধরে শূন্য রয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, আজ (৩ জুলাই) আমি একাই রোগী দেখছি। আবার টিকিট দেখে নামও ডাকছি। একজন অফিস সহকারী পর্যন্ত নেই।’ তিনি জানান, ১০২ জন রোগী দেখেছেন এক দিনে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দুলাল প্রসাদ ভট্টাচার্য্য রোগীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘একাধিক চিকিৎসক অফিস সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী না দেখে সকালে কেউ নিউরন, বিকেলে শেভরন, দি মেট্রো ল্যাব ও হাসপাতাল ডরমেটরিতে প্রাইভেট রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকেন। কয়েকজন চিকিৎসক চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রেষণে কাজ করছেন। তাঁদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করায় তাঁরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বদলির হুমকি দিচ্ছেন।’
চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ১৫০ জন, জরুরি বিভাগে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া অন্তর্বিভাগে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকেন।