চৌহালীতে যমুনার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বাদামখেত

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাদামখেত তলিয়ে গেছে। চৌহালী উমারপুর যমুনার চর, সিরাজগঞ্জ, ১৫ জুন
ছবি: প্রথম আলো

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং একই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার কয়েক শ বিঘা বাদামখেত তলিয়ে গেছে। এসব স্থানের বাদামচাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তলিয়ে যাওয়া বাদাম ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।

আবার কোনো কোনো স্থানে চাষিরা তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাঁচা বাদাম তুলছেন। সব মিলিয়ে বাদাম চাষে চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় এবং কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার চরাঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর বাদামের আবাদ হয়। এবার উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ২ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। উপজেলায় এ বছর বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন। এই বাদাম দু-এক সপ্তাহ পরে কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা। এ কারণে বেশির ভাগ জমির বাদাম এখনো পুরোপুরি পুষ্ট না হয়ে কাঁচা অবস্থায় রয়েছে।

যমুনায় পানি বাড়ার কারণে উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ এখন বাদাম তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চৌহালীর খাষকাউলিয়া, খাসপুকুরিয়া, বাঘুটিয়া, উমারপুরসহ অন্যান্য চরে বাদাম চাষ হয়। যমুনা নদীর চর জেগে ওঠায় সেখানে বাদাম চাষ করেছেন চাষিরা। কৃষি বিভাগের সহায়তায় চর এলাকাগুলোতে কয়েক বছর ধরে বাদাম আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার খাষকাউলিয়া, খাসপুকুরিয়া, বাঘুটিয়া, উমারপুরসহ কিছু চরে বাদামখেত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তাই অপরিপক্ব বাদাম ঘরে তুলছেন কৃষকেরা।

বাঘুটিয়া চরের কৃষক আব্দুস ছামাদ সিকদার (৫৮) বলেন, ‘চার–পাঁচ দিন ধরে যমুনার পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই ফলে চরাঞ্চলের বাদামখেত তলিয়ে যাচ্ছে। ঈদের পর জমি থেকে বাদাম তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই উঠতি বাদাম তলিয়ে যাওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি।’

উমারপুর চরের বাদামচাষি রকিবুল ইসলাম (৪২) জানান, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে প্রায় এক মাস ধরে কৃষকেরা চরের বালুমিশ্রিত জমিতে বাদাম আবাদ করে থাকেন। জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সব বাদাম কৃষকের ঘরে উঠে যায়।

রকিবুল ইসলাম আরও জানান, এ বছর বাদাম ঘরে তোলার আগেই যমুনা নদীতে পানি বেড়ে ডুবে যচ্ছে বাদামখেত। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেক স্থানেই চাষিরা পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্যকে নিয়ে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। কিন্তু এভাবে বাদাম তোলার পর অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাচ্ছে না। এর ওপর বেশির ভাগ ডুবে যাওয়া জমি থেকে বাদাম তোলা সম্ভবও হচ্ছে না।

চৌহালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাসিব আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে এ বছর বাদাম চাষে কৃষকদের কিছু ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।’