বাংলাদেশে ছত্রাকজনিত রোগ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগ নির্মূলে ওষুধও হাতেগোনা কয়েকটি। রোগটির চিকিৎসায় জাতীয়ভাবে কোনো নির্দেশিকা নেই। যত্রতত্র স্টেরয়েড–মিশ্রিত ওষুধ ব্যবহারের ফলে ছত্রাকজনিত রোগ ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এই রোগের চিকিৎসায় এখন নির্দেশিকার প্রয়োজন।
শুক্রবার ঢাকা ক্লাবে ‘ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব-প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থপনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আলোচনায় রোগটির বর্তমান অবস্থা ও করণীয় প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেখানে এসব কথা বলেন চিকিৎসকেরা।
বিডি ফিজিশিয়ান আয়োজিত এই উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক অংশীদার ছিল এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। নলেজ পার্টনার ছিল ইসোরাল মাপস, লুলিজল ও মাইকোফিন।
সেমিনারে চিকিৎসকেরা বলেন, ছত্রাকজনিত রোগ এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ উষ্ণপ্রধান দেশ হওয়ায় আবহাওয়া আর্দ্র থাকে। যার ফলে বাংলাদেশে এই রোগের প্রবণতা বেশি। মাটি, প্রাণী ও বংশগত কারণেও ছত্রাকজনিত রোগ হয়। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে রোগটির প্রার্দুভাব বেশি।
চিকিৎসকেরা আরও বলেন, প্রায়ই দেখা যায়, রোগী একবার ওষুধ খেয়ে আপাতদৃষ্টে ভালো হয়ে যাচ্ছেন মনে করে পরে ফলোআপের জন্য চিকিৎসকের কাছে যান না। ফলে রোগটা আবার ফিরে আসে। অনেক সময় রোগীরা ফার্মেসি থেকে নিজেরাই ওষুধ কিনে ব্যবহার করে পরে চিকিৎসকের কাছে যান। তখন রোগটা চেনা কঠিন হয়ে যায়। চিকিৎসককে রোগ নির্ণয় করতে হিমশিম খেতে হয়।
ছত্রাকজনিত রোগের অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার পেছনে যত্রতত্র স্টেরয়েড ব্যবহারকে দায়ী করেছেন চিকিৎসকেরা। বলেন, ত্বকের সমস্যা হলে মানুষ ফার্মেসি থেকে স্টেরয়েড–মিশ্রিত কোনো অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করেন। এতে সাময়িকভাবে চুলকানি কমে। কিন্তু রোগ ভেতরে থেকে যায়। যা পরে বিকট আকারে ফিরে আসে। এ ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাবেক সভাপতি কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা ও ডেঙ্গু চিকিৎসার নির্দেশিকা আছে। কিন্তু ছত্রাক অনেক বড় সমস্যা। এই রোগেরও জাতীয়ভাবে একটি নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন। অপরদিকে ছত্রাকজনিত রোগ নিয়ে গবেষণার জন্য রিসার্চ ফোরাম করার তাগিদ দেন বিএসএমএমইউর ডারমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এ জেড এম মাইদুল ইসলাম।
অধিবেশনে ছত্রাক নিয়ে ভিন্ন চারটি বক্তব্য উপস্থাপন করেন এভারকেয়ার হাসপাতালের ডারমাটোলজি অ্যান্ড ভেনেরিওলজির সিনিয়র কনসালট্যান্ট হাসিবুর রহমান, ন্যাশনাল স্কিন সেন্টারের ডারমাটোলজিস্ট অ্যাসথেটিক অ্যান্ড লেজার সার্জন কনসালট্যান্ট ইমরোজ মোহিত, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডারমাটোলজি অ্যান্ড ভেনেরিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আসিফুজ্জামান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডারমাটোলজি অ্যান্ড ভেনেরিওলজি বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম এ ওয়াহাব।
সেমিনারে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট হাসিবুর রহমান ও ইউনাইটেড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট জিনাত মিরাজ স্বপ্নার লেখা ‘ডারমাটোফিটোসিস কারেন্ট চ্যালেঞ্জেস ইন ম্যানেজমেন্ট’ এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এইচ এ এম নাজমুল আহসানের লেখা ‘ডিপ ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: এ ক্লিনিক্যাল রিভিউ’ নামের দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এসকেএফের সহযোগিতায় বিডি ফিজিশয়ান বই দুটি প্রকাশ করেছে। সারা দেশের ১৫ হাজার চিকিৎসকের কাছে বই দুটি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে সেমিনারে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসকেএফের সিনিয়র ম্যানেজার (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) ডা. মুরাদ হোসেন।
বিডি ফিজিশিয়ানের অ্যাডমিন ডা. এহসান খানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএসএমএমইউয়ের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান জায়গীরদার, ঢাকা মেডিকেলের ডারমাটোলজি বিভাগের প্রধান রাশেদ মোহাম্মদ খান, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এমইউ কবীর চৌধুরী, বিএসএমএমইউর ডারমাটোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. ইয়াকুব আলী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডারমাটোলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এন হুদা ও অরোরা স্কিন অ্যান্ড হেয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আফজালুল করিম।