ছবি এঁকে সড়ক দুর্ঘটনায় সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের পাশের সড়কদ্বীপে নির্মিত ‘সড়ক দুর্ঘটনা স্মৃতি স্থাপনা’ ঘিরে গতকাল রোববার ছবি আঁকেন জনা দশেক শিল্পী। শিল্পীদের রং-তুলিতে ফুটে ওঠে সড়ক দুর্ঘটনার বীভৎসতা। দুর্ঘটনা মানুষের মনে কী প্রভাব ফেলে, এমন বিমূর্ত বিষয়ও উঠে আসে এসব ছবিতে।

ছবি আঁকার উপলক্ষ ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। গতকাল রোববার তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁদের বন্ধু-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা দিনভর এসব ছবি আঁকেন। মিশুক মুনীরের পরিবার এই আয়োজন করে।

তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ ওই দিন নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও শামসুন নাহার হলের মাঝামাঝি এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে এই সড়ক দুর্ঘটনা হয়।

গতকাল ছবি আঁকার কর্মসূচিতে যাঁরা ছবি এঁকেছেন তাঁরা কোনো না কোনোভাবে মিশুক মুনীরের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তথ্যটি জানিয়ে মিশুক মুনীরের ভাই আসিফ মুনীর প্রথম আলোকে বলেন, ছবিগুলো কোনো প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিক্রি করে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব সংগঠন কাজ করে, তাদের দেওয়া হবে। এই ছবি আঁকার উদ্দেশ্য মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করা। ছবি আঁকার সময় আশপাশের অনেক মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে, গণমাধ্যমের মাধ্যমে অনেকে জানবে। সচেতনতা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়।

ছবি আঁকা দেখতে এসেছিলেন মিশুক মুনীরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা কাজী (মঞ্জুলি কাজী)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে আসতে চাই না। কিন্তু এবার পরিবারের অন্যরা বলল, মিশুকের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পীরা বললেন, তাই আসতে হলো।’ তিনি বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনা বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনা একটি পরিবারের স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। এতে একটি দেশের ক্ষতি তো হয়ই, পরিবারের ক্ষতি হয় অনেক। প্রতিবছর ঈদ এলে মনে পড়ে, যে মানুষটাকে নিয়ে আনন্দ, সে নেই।’

ছবি আঁকার সময় ঘুরে দেখেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কঠোর আইন ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের তিন বছরের সাজা রয়েছে। যেটা তাঁরা একদমই গায়ে নেন না। তাঁরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি আরও বলেন, মানুষকে নিজে থেকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতন হতে হবে।

তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা

গতকাল সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ছিল স্মৃতিতর্পণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা-২০১৭। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরের প্রয়াণের ছয় বছর পূর্তিতে যৌথভাবে এর আয়োজন করে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। স্মৃতিতর্পণ করেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিল্পী ঢালী আল মামুন, মিশুক মুনীরের ভাই আসিফ মুনীর, চলচ্চিত্রকার সাজেদুল আওয়াল, নাদির জুনাইদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৩ আগস্ট নিহত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেনের সঞ্চালনায় আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি লাইলুন নাহার। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, জহির রায়হানের অন্তর্ধানের পর তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের চলে যাওয়া চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্য বড় ধাক্কা। মেধা, সৃষ্টি ও নির্মাণের দিক থেকে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর পরস্পর মানিকজোড় ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সেদিনের দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরদের গাড়িতে ছিলেন শিল্পী ঢালী আল মামুনও। গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। নিহত দুই বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, মুক্তির গান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে নতুন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তারেক মাসুদ। স্মৃতিতর্পণ পর্বের আগে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদের প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত। পরে দেখানো হয় তারেক মাসুদের জীবন নিয়ে প্রসূন রহমান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ফেরা। এ ছাড়া প্রসূন রহমান নির্মিত ‘আগস্টের আরিচা রোড’ অডিও-ভিজ্যুয়াল গানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয় ১৩ আগস্টের নিহত ব্যক্তিদের।