‘ছবি তুলবি না’ বলেই হামলা

বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষে আহত ফটোসাংবাদিক রুবেল রশীদকে নিয়ে যাচ্ছেন সহকর্মীরা
ছবি: আশরাফুল আলম

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনার সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিকেরা। কারও কারও মুঠোফোন ও ক্যামেরাও কেড়ে নেওয়া হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত সাংবাদিকেরা বলেছেন, ‘ছবি তুলবি না’ বলেই তাঁদের ওপর হামলা করা হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া পুলিশের ছোড়া গুলি এবং দুই পক্ষের ঢিলের আঘাতেও আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৭২ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

এই ঘটনায় হামলার শিকার ও আহত ফটোসাংবাদিকেরা হলেন প্রথম আলোর হাসান রাজা ও আশরাফুল আলম, ডেইলি স্টার-এর এমরান হোসেন ও প্রবীর দাস, দেশ রূপান্তর-এর হারুনুর রশীদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর জয়িতা রায়, নিউএজ-এর আবদুল্লাহ অপু, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের মাহমুদুজ্জামান অভি, ডেইলি সান-এর রিয়াজ আহমেদ ও সারাবাংলা ডট নেটের হাবিবুর রহমান। ঢিলের আঘাতে ৭১ টিভির প্রতিবেদক ইশতিয়াক ইমন এবং পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে বাংলাভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক দীপন দেওয়ান ও বাংলানিউজের শেখ জাহাঙ্গীর আহত হন।

আহত ফটোসাংবাদিকেরা জানান, সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারীরা মসজিদের ভেতর ও আঙিনায় অবস্থান করেন আর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মসজিদের বাইরে থেকে ঢিল ছুড়ছিলেন। ঘটনার ছবি তুলতে তাঁরা যখন ক্যামেরা বের করেছেন, তখনই ‘এই ছবি তুলবি না’ বলে নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট এলাকায়। এ দিকে কয়েক হাজার সরকারদলীয় নেতা-কর্মী অবস্থান করছিলেন।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরই বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষ বাধে
ছবি: হাসান রাজা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক হাসান রাজাকে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়। দেশ রূপান্তর-এর ফটোসাংবাদিক হারুনুর রশীদের ক্যামেরা এবং প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাসের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ক্যামেরা নিয়ে ছবি ও ভিডিও মুছে ফেলার অভিযোগ করেছেন অনেকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বায়তুল মোকাররম এলাকায় রাখা মোটরসাইকেলগুলোর হেলমেটও নিয়ে নেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এগুলো পরে তাঁরা হামলা ও সংঘর্ষে অংশ নেন। এই হেলমেটগুলো তাঁরা পরে ফেরতও দেননি।

ইট থেকে বাঁচতে পদচারী সেতুতে বসে গণমাধ্যম কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা
ছবি: হাসান রাজা

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ঘটনার পর সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে এসেছেন। সুতরাং আজকে যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। ভেতরে নামাজ শেষ হলে যখন কিছু মুসল্লি জুতা-স্যান্ডেল দেখিয়ে মিছিল শুরু করেন, তখন অন্য মুসল্লিরা বাধা দেন।

ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা থেকে একজন বিক্ষোভকারীকে উদ্ধার করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আতিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

‘তখন দুই ধরনের মুসল্লিদের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। একটা পর্যায়ে যাঁরা জুতা-স্যান্ডেল দেখিয়েছেন, তাঁরা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। অন্য মুসল্লিরা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন, ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যান। পুলিশের ওপরও তাঁরা চড়াও হন। আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না হয়, এ জন্য রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি আনার চেষ্টা করা হয়।