ছাত্রলীগের কনিষ্ঠ এক নেত্রীকে ডেকে ‘শাসন’

ফাল্গুনী দাস
সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পর্যায়ের এক নেত্রীকে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও হল পর্যায়ের দুই জ্যেষ্ঠ নেত্রীর বিরুদ্ধে ৷ মারধরের শিকার নেত্রীর অভিযোগ, মারধরের পর তাঁর মুঠোফোনও ছিনতাই করা হয়েছে৷ তবে অভিযুক্ত দুই নেত্রী দাবি করেন, তাঁরা তাঁকে ‘শাসন’ করেছেন।

গত সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ও বঙ্গবন্ধু টাওয়ার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷ মারধরের শিকার নেত্রী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাস আর অভিযোগ ওঠা দুই নেত্রী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন৷ এই ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ফাল্গুনী দাস৷

আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই ৷ আমি ঘটনাটি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি৷ ছাত্রলীগ ব্যবস্থা না নিলে আমি মামলা করব।
ফাল্গুনী দাস

ফাল্গুনী দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় আমি বেনজীরের ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলাম। কোনো একটি মাধ্যমে সেটি জানতে পেরে সোমবার রাত ১২টার দিকে আমাকে ফোন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সামনে যেতে বলেন বেনজীর৷ সেখানে তাঁর সঙ্গে জিয়াসমিন শান্তাও ছিলেন। আমাকে নানান জিজ্ঞাসাবাদ ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা৷ একপর্যায়ে তাঁরা আমাকে মারতে উদ্যত হলে আমি সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসার চেষ্টা করি৷ বেনজীর ও জিয়াসমিন আমাকে পেছন থেকে ধাওয়া করেন৷ আইন অনুষদের কাছে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে তাঁরা আমাকে ধরে ফেলেন এবং মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন৷’

বেনজীর হোসেন ও জিয়াসমিন শান্তা

ছাত্রলীগ ব্যবস্থা না নিলে মামলা

ফাল্গুনী বলেন, ‘মারধরের সময় বেনজীর ও জিয়াসমিনের সঙ্গে দুজন ছেলে তাঁদের সহায়তা করেন। জিয়াসমিন আমার পায়ে জোরে চাপ দিয়ে ধরে রাখেন আর বেনজীর আমাকে এক পা দিয়ে চেপে ধরে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারছিল৷ তিনি আমার গলায় পা দিয়ে চাপও দেন, এতে আমার গলা দিয়ে রক্ত বের হয়৷ তাঁরা আমার মুখও খামচে দেন৷ রাস্তায় পড়ে গিয়ে আমার হাত-পা ও মাথায় আঘাত লেগেছে৷ বেনজীরের অনুসারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা শাহ জালাল আমার মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নেন৷ খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও দায়িত্বরত পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে৷ পরে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই ৷ আমি ঘটনাটি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি৷ ছাত্রলীগ ব্যবস্থা না নিলে আমি মামলা করব।’

ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত বেনজীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ফাল্গুনী তাঁদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করেছিলেন, তাই তাঁরা তাঁকে ‘শাসন’ করেছেন৷ ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ হয়েছিল, পরে ‘সমাধান করে’ নিয়েছেন৷

আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা শাহ জালাল দাবি করেন, মুঠোফোন ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন৷

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি৷ আমরা মারধরের অভিযোগটির তদন্ত করে দেখব৷ সত্যতা পেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’