ছাত্রলীগের ‘স্লেজিং-রিপ্লাইয়ের’ পর থমথমে চবি ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর পুলিশের অবস্থান। সোহরাওয়ার্দী হল মোড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পরিস্থিতি এখনো থমথমে। বিজয় ও সিএফসি—দুই উপপক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। বিজয়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২৫ জানুয়ারির মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারলে সংঘর্ষ-মারামারি আরও বড় হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেই দায় নিতে হবে।

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দায়ের কোপে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনটির এ সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বুধবার বেলা একটার দিকে জরুরি সভায় বসেছে প্রক্টরিয়াল বডি। এ সভা শেষে প্রক্টরিয়াল বডি উপাচার্য শিরীণ আখতারের সঙ্গেও বসবে। সভায় তদন্ত কমিটি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরে নানা আলোচনা চলছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাস্পাসে। কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে ক্যাম্পাসের মূল ফটকে আটকানোর পর গতকাল রাত ১২টায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিজয় ও সিএফসির নেতা-কর্মীরা।

এদিকে আজ আবাসিক হলগুলোতে গিয়ে থমথমে পরিস্থিতি দেখা যায়। বিজয়ের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী, আলাওল ও এফ রহমান হলে অবস্থানে আছেন। আর সিএফসির নেতা-কর্মীরা আছেন শাহ আমানত ও আবদুর রব হলে।

বিজয়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, রাতের আঁধারে বিনা উসকানিতে তাঁদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তাঁরা এর শোধ নেবেন। অন্যদিকে সিএফসির নেতা-কর্মীরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে বিজয়ের নেতা-কর্মীরা ‘স্লেজিং’ করছেন। এ কারণে তাঁরা গতকাল রাতে ‘রিপ্লাই’ দিয়েছেন।

বিজয়ের নেতা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। কিন্তু তারা (সিএফসি) বারবার আক্রমণ করছে। সভাপতি রেজাউল হকের ইন্ধনে এসব হচ্ছে। কিন্তু কতক্ষণ ধৈর্য ধরা যায়। সভাপতি অস্ত্রের জোগান দিচ্ছেন। মূলত কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করতেই এ হামলা।’

ইলিয়াছের বক্তব্যের বিষয়ে রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিয়াছের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে। সে আটকাতে পারবে না। আর উপপক্ষগুলোর মারামারির কারণে কমিটি গঠনের কার্যক্রম পেছাবে না।’
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

১৩ জানুয়ারি দুপুরে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শেখ নাজমুল ইসলাম ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে তাঁদের মূল ফটকে আটকে দেন বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা। এর পর থেকে পরিস্থিতি থমথমে হতে থাকে। এর মধ্যে ১৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে বিজয়ের এক নেতার জন্মদিন অনুষ্ঠানে ঢিল ছোড়েন বলে অভিযোগ ওঠে সিএফসির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল। পরে গতকাল সারা দিন বিজয়ের নেতা-কর্মীরা হলে অবস্থানে ছিলেন। সর্বশেষ গতকাল রাতে সংঘর্ষ হয়।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই সিএফসির নেতা রেজাউল হককে সভাপতি ও সিক্সটি নাইনের নেতা ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু প্রায় আড়াই বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দুই পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এ দুই পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। বিজয় ও সিএফসি উভয়ই মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী।