ছাদের নিচে টিনের চালা, প্রাণ হাতে বসবাস

ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। পানি পড়ছে চুইয়ে চুইয়ে। ঝুঁকি এড়াতে ছাদের নিচে দেওয়া হয়েছে টিনের চালা। সেখানেই বছরের পর বছর বসবাস চলছে।
রংপুরের কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনগুলোর দুর্দশার চিত্র এটি। শুধু ছাদ নয়, ভবনগুলোতেই সমস্যা। দরজা-জানালা অনেক দিনের পুরোনো। তার অনেকগুলো ভাঙা, অনেকগুলো একেবারে বিধ্বস্ত।
কলেজ ক্যাম্পাসের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বসবাস। সেখানে ৪৪টি বাড়িতে ৪৪ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে আছেন। বাড়িগুলোর মধ্যে দুটি টিনশেডের এবং বাকিগুলো একতলা পাকা। আটটি বাড়ি কিছুটা ভালো হলেও ৩৬টির অবস্থা খারাপ।
সরেজমিন দেখা গেছে, সবগুলো বাড়ি জীর্ণ, স্যাঁতসেঁতে। অধিকাংশ বাড়িই বিধ্বস্ত, দরজা-জানালা ভাঙা। পলেস্তারা খসে পড়ছে যেখানে-সেখানে।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলেন, বৃষ্টির সময় ঘরের আসবাব এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরাতে হয়। বৃষ্টি বেশি হলে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। নিয়মিত বিছানা নষ্ট হয় ছাদের পলেস্তারা খসে।
কলেজ সূত্র জানায়, প্রায় ৭০ বছর আগে নির্মিত এসব ভবনের সার্বিক অবস্থা দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি দল ১৯৯৭ সালে পরিদর্শনে আসে। তখন সংস্কারের কথা বলা হলেও আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকের একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন গ্রন্থাগারিক নাদিরা হোসেন। তিনি জানালেন, চার কক্ষের বাড়ির গোটাটাই জীর্ণ। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে অনবরত। বৃষ্টির সময় চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে। ঝুঁকি এড়াতে তিনি নিজেই ছাদের নিচে টিনের ছাউনি দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়িটির ছাদ ছাড়াও দেয়ালের অবস্থাও ভালো নয়। স্যাঁতসেঁতে। দরজা-জানালাগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাধ্য হয়ে এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বলে জানালেন নাদিরা হোসেন।
ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে একতলা ছাদ পেটানো একটি বাড়িতে থাকেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার। এই বাড়িটিও বেহাল। বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ছাদের অনেক স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে। প্রদীপ কুমার বলেন, ‘কী আর করব? বাধ্য হয়ে ১০ বছর ধরে আছি। মাঝেমধ্যে নিজ উদ্যোগে সংস্কার করি।’
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নার্গিস আক্তার রিদওয়ানার চার কক্ষের ছাদ পেটানো বাড়িটিরও একই দশা। জরাজীর্ণ। দরজা-জানালা ভাঙা।
একই অবস্থা দেখা গেল গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবার রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলমের বাড়িসহ আরও কয়েকটি বাড়ির।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বিনতে হোসাইন নাসরিন বানু বলেন, এসব বাড়ি অনেক পুরোনো। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানোর পর অনেক আগে তারা দেখেও গেছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের প্রতিষ্ঠা ১৯১৬ সালে। বর্তমানে এখানে ২১ বিভাগে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ১৬১ জন, আর কর্মকর্তা-কর্মচারী ১২১।