ছুটির দিনে শিশুদের মুখে হাসি

দুপুর ১২টা। বাবার হাত ধরে এসেছে সৌপর্ণ। মা-বাবা দুজনের হাতেই সৌপর্ণের আবদারে কেনা বই। আইকিউ মাস্টার, ছোটদের মজার মজার ধাঁধা, বিজ্ঞানের বিস্ময় ও আবিষ্কারের গল্প, ভুতুড়ে দুর্গ, অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ, ছোটদের বিজ্ঞানের খেলা, টোনাটুনির ম্যাজিক এন্ড কালারিং বুকসহ আরও বেশ কিছু বই। এসব পেয়ে খুশিতে ডগমগ সৌপর্ণ।

রাফিয়ার বয়স চার। মনের আনন্দে আঁকছিল জাতীয় পতাকা। পাশে বসেছিল শুভ্র। আঁকছিল সবুজ একটা মাঠের ছবি। দুজনেরই চোখে-মুখে হাসি। তাদের মতো শিশু চত্বরে ভিড় করেছিল আরও অনেক শিশু। তারা ছবি আঁকে, গান গায়। এই ভিড়ে শিশুদের কোলাহলে রাফিয়ার মা তাহামিনা আক্তার বললেন, ‘সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকি, কবে বইমেলা শুরু হবে।’

একুশে গ্রন্থমেলার গতকালের শুরুটা ছিল শিশুদের। এ কারণে কাল টুকরা টুকরা অনেক ছবি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল মেলার মাঠজুড়ে। ছোটদের নিয়ে বড়রা এসেছে, দল বেঁধে অনেকেই এসেছে, তবে ‘ভিড়’ খুব একটা ছিল না। আবার সন্ধ্যার চিত্রটা ছিল অন্য রকম।

বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফিনফিনে ঠান্ডা, বাতাসে বসন্তের আগমনী বার্তা। সন্ধ্যা হতে না–হতেই ভিড় জমে উঠেছিল মেলায়। ছোট-বড় নানা প্রতিষ্ঠানের সামনে পাঠকের জমায়েত। এদিন বিক্রিও হয়েছে বেশ। বেশির ভাগ প্রকাশক জানালেন, এ পর্যন্ত মেলার সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে শুক্রবার। সন্দেহ নেই, লিটল ম্যাগাজিন চত্বরটি বিকেল থেকেই জমজমাট। প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছে এ চত্বর। বইমেলায় কত যে আয়োজন, কত যে ভাবনা, বুঝিয়ে দেয় লিটল ম্যাগাজিনের চত্বর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানটিও দেখা গেল জমজমাট। এখানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুমার চক্রবর্তী, তুষার আবদুল্লাহ, কাজী রাফি ও জাহানারা পারভীন।

ছুটির দিন ঘিরে প্রকাশকদের যেমন প্রত্যাশা থাকে, তেমনি থাকে প্রস্তুতিও। ২ ফেব্রুয়ারি রোববার শুরু হওয়া মেলা ষষ্ঠ দিনে এসে প্রথম সরকারি ছুটির দিন পেল। তাই প্রকাশকেরা নিয়ে রেখেছিলেন আলাদা প্রস্তুতি। নামী পত্রিকাগুলোয় নিজেদের উল্লেখযোগ্য বইটির যেমন বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, তেমনি নতুন বই এনেছেন বেশি বেশি। গতকাল সর্বোচ্চ ৩০৮টি নতুন বই এনেছেন প্রকাশকেরা। সেই তালিকায় যেমন ছিল শহরের নামকরা বা জনপ্রিয় লেখকের বই, তেমনি ছিল যশপ্রার্থী তরুণ বা শৌখিন লেখকের বই। সারা বছর দেখা যায়নি বা লেখক হিসেবে পরিচিত নন, এমন অনেকেরই বই দেখা গেল মেলায়।

মেলায় প্রথমা প্রকাশন এনেছে শিশিরকুমার ভট্টাচার্যের আইনস্টাইন: জীবন ও আপেক্ষিক তত্ত্ব, রাহমান চৌধুরীর মাহাথির এবং মালয়েশিয়া। প্রথমা গতকাল এনেছে আনিসুল হকের নতুন উপন্যাস এখানে থেমো না। পাঠক সমাবেশ এনেছে আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনা ও ভূমিকায় জলধর সেনের আত্মজীবনী। আগামী এনেছে আবুল কাসেম ফজলুল হক সম্পাদিত সাহিত্যজিজ্ঞাসা। এ ছাড়া মেলায় পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে মোস্তফা কামালের মানবজীবন। অন্যপ্রকাশ এনেছে সাদাত হোসাইনের মেঘেদের দিন। অনিন্দ্য প্রকাশনী এনেছে আসাদুজ্জামান অংশুমানের জলে ডোবা প্রাণ, দ্যু প্রকাশন এনেছে অর্ণব সান্যালের শুধুই কোম্পানির প্রচারের জন্য। বটেশ্বর বর্ণন এনেছে মঙ্গল কুমার চাকমার বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার ও প্রান্তিকতা।

আজ শনিবার সপ্তম দিন মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর।