ছোট মাছের বড় বাজার

মিঠাপানির ছোট মাছের বড় বাজার হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ফিশারিঘাটে সারা বছরই লেগে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে মাছ কেনাবেচা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বাজারে পাওয়া যায় মেঘনা নদীর সুস্বাদু সব মাছ। এর মধ্যে কই, শিং, টেংরা, পাবদা, মেনি, বাইলা, পোয়া, কাজলি, কাচকি, মলা, বজরি, বইছা, পুঁটি, টেকচাঁদা, দারকিনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছের কদর এখন ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে অনেক বেশি। এসব ছোট মাছের পাশাপাশি রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতলসহ প্রচুর বড় মাছও বিক্রি হয়।
গত সোমবার সকালে ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকার-মহাজনেরা এসে ভিড় করেছেন। ঘাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। নৌকায় করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। এসব মাছের ডাক ওঠাচ্ছেন পাইকারেরা। মাছ কিনে ট্রাকে বোঝাই করে পাইকারেরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়তের পাইকারি মাছ বিক্রেতা রহিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেঘনার তরতাজা ছোট মাছের কদর অনেক বেশি। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ভোজনরসিক মানুষ আগে থেকেই এসব মাছের অর্ডার দেন। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাদের চাহিদামতো বাসায় বাসায় আমরা এসব মাছ পৌঁছে দিই। এই মাছের স্বাদ যাঁরা একবার নিয়েছেন, তাঁরা ভুলতে পারেন না। এ জন্য বারবার অগ্রিম অর্ডার করেন।’
পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকার বাসিন্দা দেওয়ান আলমগীর ও নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার এই ঘাটে মাছ কিনতে আসি। দামে কম, তরতাজা ও সুস্বাদু হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পছন্দের তালিকায় সব সময় শীর্ষে থাকে এখানকার ছোট মাছ।’
সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের রুনা আহম্মেদ বলেন, প্রতি সপ্তাহে তাঁরা এ বাজার থেকে মাছ কেনেন। এসব মাছ ঢাকায় বসবাস করা আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠান।
মাছ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম ও গোলজার হোসেন বলেন, এই ঘাটে কুমিল্লার দাউদকান্দি, মেঘনা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের নুনেরটেক এলাকার জেলেরা মাছ বিক্রি করতে আসেন। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৫ লাখ টাকার শুধু ছোট মাছ বিক্রি হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, ‘এ ঘাটের মাছের খ্যাতি এখন ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে প্রচুর তাজা মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখানকার ছোট মাছ নিয়ে আমরা এখন গর্ব করতে পারি। স্থানীয় জেলেদের সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি।’