ছোট্ট কাঁধে সংসারের বড় বোঝা

সংসারের ঘানি টানতে শিশুদের কেউ কেউ মা–বাবার সঙ্গে কাজ নিয়েছে মহালগুলোতে। দুটি উপজেলায় শুঁটকি খাতের শ্রমজীবীদের ২০ শতাংশ শিশু। এদের মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুশ্রমিক ৪১ শতাংশ।

শুঁটকি পল্লিতে কাজ করছেন নারী ও শিশু
ছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড রোদে ‘মায়ের দোয়া’ মহালে বাঁশের মাচায় সামুদ্রিক কাঁচা মাছ টাঙাচ্ছিল ১৪ বছর বয়সী একটি শিশু। ধুয়ে–কেটে লবণ–হলুদ মাখানো মাছগুলো রোদে শুকিয়ে শুঁটকি হবে। শুঁটকি উৎপাদনকেন্দ্রকে স্থানীয়ভাবে ‘মহাল’ বলা হয়। কক্সবাজার পৌরসভায় শুঁটকির জন্য প্রসিদ্ধ নাজিরারটেকের ওই মহালে শিশুশ্রমিকদের একজন সে। বয়স কম বলে অন্যদের তুলনায় তার পারিশ্রমিক কম। তবে বয়স কম বলে কাজের সময়ের কোনো হেরফের নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয় তাকে।

কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরত্বে নাজিরারটেকের মহালগুলোতে এই শিশুর মতো এমন শিশুশ্রমিকের সংখ্যা হাজার হাজার। সংসারের ঘানি টানতে এই শিশুদের কেউ কেউ মা–বাবার সঙ্গে কাজ নিয়েছে মহালগুলোতে। ১ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মহাল ঘুরে শিশুশ্রমিকদের দেখা পেয়েছে প্রথম আলো

কক্সবাজার পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছটা, মোস্তাইক্যাপাড়াসহ ১৬টি সমুদ্র উপকূলীয় গ্রাম নিয়ে দেশের বৃহৎ শুঁটকি উৎপাদনকেন্দ্র ‘নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল’। এখানকার ছোট-বড় অন্তত ৬০০ মহালে এখন কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (সংরক্ষিত-১) কাউন্সিলর শাহীন আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ৬০০ মহালে এখন শ্রমিকের কাজ করছেন অন্তত ২০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ। শুঁটকি উৎপাদন বাড়লে শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও বাড়ে। এখন কমপক্ষে ১২ হাজার নারী, সাড়ে ৮ হাজার পুরুষ ও আড়াই হাজারের বেশি শিশুশ্রমিক শুঁটকি প্রক্রিয়ায় কাজ করছে।

শুঁটকি উৎপাদনকেন্দ্রে একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে শিশুশ্রমের চিত্র। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপ এলাকায় শুঁটকি উৎপাদনে যুক্ত ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৪১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল আপলিফটমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ট্রাস্ট (সুইট) কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলায় গবেষণাটি পরিচালনা করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। গবেষণাটি পরিচালিত হয় গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। ওই দুটি উপজেলায় ৫৬১টির মতো শুঁটকি তৈরির স্থাপনা রয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, সেখানে মোট ১৪ হাজার ৩৬৬ জনের মতো শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ৮৭৬ জন বা ২০ শতাংশ শিশু, ৬৩ শতাংশ নারী, বাকিরা পুরুষ। শিশুশ্রমিকদের ৫৯ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। শিশুশ্রমিকদের মধ্যে আবার মেয়েশিশুর সংখ্যা বেশি, ৭২ শতাংশ। গবেষণাটির জন্য ৪৬১ জন শিশুশ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

শ্রম আইন, ২০০৬–এর সর্বশেষ সংশোধনে (২০১৮) শিশুশ্রমিকের সংজ্ঞা ও বয়সে পরিবর্তন এসেছে। সংজ্ঞায় শিশুর অংশ বাদ দিয়ে শুধু ‘কিশোর’ উল্লেখ করে বলা আছে, ‘কিশোর’ অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেছে, কিন্তু ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করেনি এমন ব্যক্তি।

মোট ১৪ হাজার ৩৬৬ জনের মতো শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ৮৭৬ জন বা ২০ শতাংশ শিশু, ৬৩ শতাংশ নারী, বাকিরা পুরুষ। শিশুশ্রমিকদের ৫৯ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। শিশুশ্রমিকদের মধ্যে আবার মেয়েশিশুর সংখ্যা বেশি, ৭২ শতাংশ। গবেষণাটির জন্য ৪৬১ জন শিশুশ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুঁটকি উৎপাদনে শিশুশ্রমকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের আওতাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর।

কাজ না করলে সংসার চলে না

মায়ের দোয়া মহালের লাগোয়া রহমান এন্টারপ্রাইজ মহালে কাঁচা মাছ ধুয়ে শুঁটকি প্রস্তুতের কাজ করে ১২ বছরের শিশুটি। দু–তিন বছর আগে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় বসবাসের সময় তার বাবার কানে জোঁক ঢুকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। সংসারে ভার ঘাড়ে নিয়ে বাবা ও ছোট দুই ভাইকে নিয়ে নাজিরারটেকে চলে আসে ওই শিশু। কাজ নেয় শুঁটকি তৈরিতে। শিশুটি জানায়, কাজ না করলে বাবা–ভাইদের না খেয়ে থাকতে হবে।

কাজ না করলে সংসার চলে না ১৪ বছরের ওই শিশুটিরও। একই মহালে মায়ের (৫৫) সঙ্গে সে কাজ করে। এই শিশু জানায়, সকাল ছয়টা থেকে মহালে আসে সে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করে। দিনে মজুরি পায় ৩০০ টাকা।

তার মা প্রথম আলোকে বললেন, ঘরে অসুস্থ স্বামী। ছয় মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তাঁর এই ছেলে দ্বিতীয়। সব মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই ছেলে নিয়ে শুঁটকিমহালের পাশে পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকেন। ১৪ বছর বয়স হলেও সে কখনো স্কুলে যায়নি। কয়েক বছর আগে তাঁরা এসেছেন কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে।

শিশুদের মহালের কাজে যেন রাখা না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে
মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র

বেলা ১১টায় নাজিরারটেকের মায়ের দোয়া মহালে গিয়ে দেখা গেছে, ৫২ জন শ্রমিক সেখানে শুঁটকি তৈরির কাজ করছেন। এর মধ্যে ৪০ জন নারী, ১০ জন পুরুষ ও ২ জন শিশু।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুদের মহালের কাজে যেন রাখা না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তবে মায়ের দোয়া মহালের মালিক মো. দেলোয়ার হোসেনের দাবি, কয়েক বছর আগেও মহালগুলোতে অন্তত ১০ হাজার শিশুশ্রমিক কাজ করত। এখন অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন প্রতিটি মহালে দু–একজন করে শিশুকর্মী থাকে। তাদের কাজ না দিলে সংসার বিপদে পড়বে, না খেয়ে মরবে।’

কক্সবাজার উপকূলের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে কাঁচা মাছ পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করছে দুই শিশু। ২ ডিসেম্বর দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শিশুরা, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বেশি

উইনরক–সুইটের গবেষণায় বলা হয়েছে, শুঁটকি তৈরিতে শিশু-কিশোরদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করতে দেখা গেছে। ৮৬ শতাংশ শিশুকে কাঁচা মাছভর্তি ঝুড়ি, ভারী মাল টানতে হয়, ৫৩ শতাংশ ধারালো জিনিসপত্র দিয়ে কাজ করে, ৪৪ শতাংশকে কাজের অধিকাংশ সময় থাকতে হয় পানি–কাদায়, নড়বড়ে তাক বা মইয়ে উঠতে হয় ৩২ শতাংশকে, রাসায়নিকের মতো বিপজ্জনক পদার্থ নিয়ে কাজ করে ৩১ শতাংশ।

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে শিশুশ্রমের ওপর গবেষণাটিতে যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুন নবী। তিনি বলেন, শিশুদের এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে ‘পুশ ফ্যাক্টর’ও কাজ করে। এই শিশুদের পরিবারগুলো চরমভাবে প্রান্তিক। নদীভাঙনসহ দারিদ্র্যের কারণে এলাকা ছেড়ে শুঁটকিপল্লির আশপাশে বসতি গড়ে তোলা মানুষের সন্তানেরাই এ পেশায় যুক্ত হয়েছে। ছেলেরা বিকল্প নানা পেশা খুঁজে নিতে পারে বলে এখানে মেয়ের সংখ্যা বেশি। মালিকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা শিশুশ্রমিকদের নিতে না চাইলে মা শ্রমিকেরা কাজ করতে অনাগ্রহ দেখান। তাই ইচ্ছে থাকলেও শিশুশ্রমিকদের কাজে রাখতে বাধ্য হন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুশ্রমিকদের ৭৮ শতাংশ অভ্যন্তরীণ অভিবাসন থেকে এসেছে। বিভিন্ন জেলা–উপজেলা থেকে শিশুদের পরিবার এসে শুঁটকিপল্লির আশপাশে সরকারি খাসজমিতে বাস করছে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহীন আকতার প্রথম আলোকে জানান, শুঁটকিশ্রমিকদের ৮০ শতাংশ রংপুর, বরিশাল, নোয়াখালী জেলার। বাকিরা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা। অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতভিটা-ঘরবাড়ি হারিয়ে নাজিরারটেক উপকূলে আশ্রয় নিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শুঁটকিমহালগুলোর আশপাশে ১০-১২টি গ্রাম। গ্রামগুলোতে শুঁটকিশ্রমিক পরিবারের বসতি।

মজুরি কম, নির্যাতনও চলে

শুঁটকিমহালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল-সন্ধ্যা ১২ ঘণ্টা কাজ করে পুরুষেরা মজুরি পান দৈনিক ৭০০ টাকা। নারীরা পান অর্ধেক—৩৫০ টাকা। আর শিশুরা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

কম টাকায় বেশি মুনাফার প্রবণতার কারণে শিশুশ্রম বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন উইনরক ইন্টারন্যাশনালের ক্লাইম্ব প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জামান খান। তিনি বলেন, শিশুদের নিয়োগ দিলে কম টাকায় কাজ করানো যায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বেশি মুনাফার জন্য মালিকেরা শিশুকর্মী নিয়োগ দেন। শিশুশ্রম নিরসনে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আরও জোরালোভাবে কাজ করা এবং সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন শিশুশ্রমিককে দিনে গড়ে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করতে হয়। প্রচণ্ড রোদে দিনে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। শুঁটকিমহালে অনেক শিশুকে কাজে বাধ্য করা হয়। কারও মা–বাবা মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে রেখেছেন। কোনো শিশু আবার নিজে কাজ ছাড়তে পারবে না, সেই চুক্তিতে নিয়োগ পায়। কাজের জায়গায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে ২৯ শতাংশ শিশুশ্রমিক। ৩৪ শতাংশ মেয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলেও গ্লাভস, মাস্ক, ওয়াটারপ্রুফ ক্যাপের মতো সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। প্রচণ্ড মাথাব্যথা, ত্বকের সমস্যা, পিঠে ও মাংসপেশিতে ব্যথা, কেটে যাওয়া, জ্বর ইত্যাদি অসুস্থতায় হরহামেশাই ভোগার অভিযোগ করেছে এই শিশুশ্রমিকেরা।

কক্সবাজার উপকূলের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে কাজ করছেন শিশু শ্রমিকেরা
ছবি: প্রথম আলো

উইনরক ইন্টারন্যাশনালের সিভিক এনগেজমেন্ট অ্যান্ড ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট বিশেষজ্ঞ মো. তানভীর শরীফ বলেন, এই শিশুরা আট–নয় ঘণ্টা রোদে সরাসরি কাজ করে। পানিতে কাজ করতে করতে আঙুলের ফাঁকে ঘা হয়ে যায়।

উইনরক ইন্টারন্যাশনালের যোগাযোগ ও মিডিয়া পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস (বিসিসিপি) শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতশিল্পে শিশুশ্রম বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচারে যুক্ত। বিসিসিপির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, শিশুশ্রম নিরসনের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই সঠিক বার্তা সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে হবে। শিশুশ্রমিক, মা–বাবা, মালিকপক্ষ ও নীতিনির্ধারক—প্রত্যেককেই ভালোভাবে বুঝতে হবে। প্রতিটি ধাপে কার্যকর ফল পেতে সমস্যার গভীরে যেতে হবে এবং সমাধানে পৌঁছাতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিতে হবে।

বিসিসিপি–ক্লাইম্ব প্রকল্পের টিম লিডার আবু হাসিব মোস্তফা জামাল জানান, দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিশু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। করোনাকালে এই শিশুরা আরও নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্তের সুপারিশ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের শিশুশ্রম সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে শ্রমে নিয়োজিত মোট শিশুর সংখ্যা ১৭ লাখ। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১২ লাখ ৮০ হাজার।

শিশুরা থাকবে স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে নয়। কাজ থেকে সরিয়ে এনে এই শিশুদের পরিবারকে কীভাবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনা যায় এবং ওই শিশুদের পড়াশোনা শেষে আবারও কাজে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মোস্তাফিজুর রহমান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক

শিশুসহ সব শ্রমজীবী মানুষের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিকাশের পক্ষে অন্তরায়, এমন ৩৮টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ একটি তালিকা প্রকাশ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে শুঁটকি উৎপাদনশিল্প নেই। এ বছর বেশ কয়েকটি বৈঠকের পর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শিশুশ্রম–সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি শুঁটকি উৎপাদনশিল্প শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

গত ৩০ নভেম্বর সুপারিশটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি শিশুশ্রম–সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্যও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শিশুরা থাকবে স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে নয়। কাজ থেকে সরিয়ে এনে এই শিশুদের পরিবারকে কীভাবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনা যায় এবং ওই শিশুদের পড়াশোনা শেষে আবারও কাজে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন করতে চায় সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে সব খাত থেকে শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।