ছয় নদীর পানিবণ্টনে তিন বিষয়ে জোর বাংলাদেশের

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত এখন অভিন্ন ছয়টি নদ-নদীর পানিবণ্টনে চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আলোচনা করছে। মুহুরী, খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু ও গোমতী—এই ছয়টি অভিন্ন নদ-নদীর রূপরেখা চুক্তি কত বছরের জন্য হবে, দুই দেশের পানি ভাগাভাগির হার কেমন হবে এবং কোন জায়গা থেকে পানি মাপা হবে—এ বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া উচিত বলে মনে করে বাংলাদেশ। ভারতও ছয় নদ-নদীর চুক্তি সইয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ উত্থাপিত বিষয়গুলোতে একমত পোষণ করেছে।

আজ বুধবার শেষ হওয়া দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। জেআরসির ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দুই দিনের আলোচনার শেষ দিনে গঙ্গার পানি চুক্তির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে যৌথ সমীক্ষার জন্য চুক্তি করা এবং অভিন্ন নদ-নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী অববাহিকাভিত্তিক সহযোগিতার বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারত এখন মুহুরী, খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু ও গোমতী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে।

জেআরসি সদস্য ও ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা মো. মাহমুদুর রহমান সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছয় নদ-নদীর চুক্তি সইয়ের জন্য আরও তথ্য জরুরি। চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে দুই দেশ ইতিমধ্যে ছয় নদ-নদীর ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২২ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করেছে। যেসব তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, তা মূলত নদীর পানি যেখানে পরিমাপ করা হয়, সেখানকার তথ্য। কিন্তু পানিবণ্টনের খসড়া চুক্তির জন্য এই তথ্য পর্যাপ্ত নয়। ওই ছয় নদ-নদীর পানি উজানে প্রত্যাহার হয়েছে কি না, সেটা জানা জরুরি। বাংলাদেশ এসব তথ্য চেয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে ওই নদীগুলোর পানি প্রত্যাহার নিয়ে যেসব তথ্য আছে, তা ভারতকে জানানো হবে।

জেআরসির ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় ছিলেন এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অভিন্ন নদীর চুক্তি নিয়ে আলোচনার শুরু থেকেই ভারতের যে রাজ্যগুলোর ওপর দিয়ে ছয় নদ-নদী প্রবাহিত, সেই রাজ্যগুলোকে যুক্ত রাখার ওপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে। এই ছয় নদ-নদী পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

‘চুক্তির জন্য দুই দেশ ছয় নদ-নদীর ২২ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিনিময় করেছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। বাংলাদেশ আরও তথ্য চেয়েছে।’
মো. মাহমুদুর রহমান সদস্য, জেআরসি

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছয় নদ-নদীর বিষয়ে চুক্তি সইয়ের জন্য মৌলিক তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অভিন্ন নদীর পানি চুক্তি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে নদীর পানি কোন অংশ থেকে পরিমাপ করা হবে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য পানির একটি হার ধরে রেখে দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগির হার কেমন হবে এবং চুক্তির মেয়াদ কত বছরের জন্য—এ বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া জরুরি। ভারতও জানিয়েছে, চুক্তির জন্য এ বিষয়গুলো জরুরি।

গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার—এই ছয়টি নদ-নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কাঠামো দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

জানা গেছে, অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাস আরও আগে থেকে সরবরাহ করা, পলিমাটি ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়ে দুই দেশ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

বৈঠকে থাকা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্য এক সদস্য জানান, ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় গঙ্গার পানি চুক্তির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য পদ্মা-গঙ্গা ব্যারাজের যৌথ সমীক্ষার জন্য চুক্তি করার বিষয়ে দুই দেশ আলোচনা করেছে। কারণ, এই প্রথমবারের মতো গঙ্গার পানি চুক্তির আলোকে পানির ব্যবহারের বিষয়ে দুই দেশ একসঙ্গে সমীক্ষা করবে।

সমীক্ষার কার্যপরিধির খসড়া এরই মধ্যে দুই দেশ একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করেছে।