জজ মিয়া একটা সরকারি চাকরি চান

জজ মিয়া
ফাইল ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে জন্ম নেওয়া আলোচিত ‘আষাঢ়ে গল্পের’ নায়ক জজ মিয়া ভালো নেই। ওই ঘটনার একজন ভুক্তভোগী হিসেবে নিজের পুনর্বাসনের দাবিতে তিনি ঘুরছেন নানা জায়গায়। এখন গাড়িচালকের চাকরি করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। করোনাকালে নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। আছে নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়। সরকারের কাছে একটা সরকারি চাকরি পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এই দাবির কথা জানান জজ মিয়া। তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ঘুরেছেন। বিভিন্ন আশ্বাস পেলেও সহায়তা পাননি। কারাগার থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে চেয়েছেন। কিন্তু কোথাও সুযোগ পাননি। এখন পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন জজ মিয়া। তাঁকে নোয়াখালীর সেনবাগের গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করে ২০০৫ সালের ৯ জুন ঢাকায় নিয়ে আসেন এই মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশিদ।

জজ মিয়া জানান, তাঁকে আটক করার ছয় দিন পর ঢাকার আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২১ দিন রিমান্ডসহ মোট ২৭ দিন সিআইডি কার্যালয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে জজ মিয়াকে রাখা হয়। তাঁর জন্য নতুন লেপ-তোশক ও বালিশ কেনা হয়। ভালো খাবার দেওয়া হয়। ২৭ দিন ধরে তাঁকে মূলত ভয় দেখানো ও সাজানো জবানবন্দি মুখস্থ করানো হয়। কয়েক দিন পরপর পরীক্ষা নেওয়া হতো, জবানবন্দি ঠিকভাবে মুখস্থ হয়েছে কি না। এরপর আদালতে নিয়ে সেই জবানবন্দি দেওয়ানো হয়।

প্রথম আলোয় ছাপা ‘আষাঢ় মাস...জমেছে আষাঢ়ে গল্পের আসর’ শীর্ষক কার্টুন

এরপর জজ মিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে খরচের টাকা দিতেন তদন্তে যুক্ত সিআইডির তৎকালীন কর্মকর্তারা। ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘জজ মিয়ার পরিবারকে টাকা দেয় সিআইডি’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সাজানো জবানবন্দি আদায়ের গল্প ফাঁস হয়। এর আগে জজ মিয়ার ওই সাজানো জবানবন্দি নিয়ে ২০০৫ সালের ২৯ জুন প্রথম আলোয় ছাপা হয় ‘আষাঢ় মাস...জমেছে আষাঢ়ে গল্পের আসর’ শীর্ষক শিশির ভট্টাচার্য্যের বহুল আলোচিত কার্টুন।

২০০৯ সালের ২৭ জুলাই কারাগার থেকে মুক্তি পান জজ মিয়া। এখন থাকেন নারায়ণগঞ্জে। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কখনো রাজনীতি করিনি। বিএনপি আমাকে নিয়ে নাটক বানিয়েছে। সেই নাটক ফাঁস করে দেওয়ায় এখনো আতঙ্কে ভুগি।’