জন্মস্থানে কবির স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

মহাকবি কায়কোবাদের ব্যবহৃত ঘরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে l ছবি: প্রথম আলো
মহাকবি কায়কোবাদের ব্যবহৃত ঘরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে l ছবি: প্রথম আলো

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কবির পুরো বাড়ি বেদখল হয়ে গেছে। কবির ব্যবহৃত একটি ভাঙাচোরা ঘর ও একটি আমগাছ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। কবির বাড়িতে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা কবির বিষয়ে তথ্য দিতে রাজি নন। তবে একজন গৃহিণী বলেন, কবির কোনো চিহ্ন এখন আর ওই বাড়িতে নেই। কবির বংশধরেরা সব জমি বিক্রি করে চলে গেছেন বলে তিনি দাবি করেন। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, কবির বংশধরেরা কিছু জমি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশীরা সব জমি দখল করে নিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে কবির বাড়ির সামনের রাস্তাটির নামকরণ করা হয় কবির নামে। তখন একটি নামফলকও নির্মাণ করা হয়। তবে রাতের আঁধারে ফলকটি কে বা কারা ভেঙে ফেলে। ফলে সড়কটি যে কায়কোবাদের নামে, তা অনেকেই জানেন না। ১৯৭২ সালে সাবেক সাংসদ সুবিদ আলী খান কায়কোবাদের সম্মানে তাঁর কর্মস্থল আগলা ডাকঘর-সংলগ্ন জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। কিন্তু এই বিদ্যালয়ে কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, কায়কোবাদের অনেক বই রয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ আছে। কাজেই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানের দরকার নেই বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া নবাবগঞ্জে প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার চৌরাস্তায় কায়কোবাদের নামে চত্বর নির্মাণ করা হলেও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটি সরিয়ে ফেলা হয়। বিভিন্ন সংগঠন চত্বরটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানালেও ১০ বছরে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

কায়কোবাদের নাতি টুটুল আলম কোরায়শী বলেন, কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে কবির নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা জরুরি। এট হলে কবি সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে। তিনি বলেন, দেশের অনেক কবির জন্য বছরে অন্তত দুবার তাঁদের জীবন-দর্শন সম্পর্কে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু কায়কোবাদের বেলায় এ রকম অনুষ্ঠান চোখে পড়ে না।

কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরশাদ আলী বলেন, মহাকবি কায়কোবাদ নবাবগঞ্জের গর্ব। বাড়ির সামনের যে মসজিদের আজান শুনে কবি ‘আযান’ কবিতাটি লিখেছিলেন, সেটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিল আহমেদ বলেন, কবি কায়কোবাদের জন্মস্থানে স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য অনেক কিছুই থাকার কথা ছিল। কিন্তু সে রকম কিছুই চোখে পড়েনি। চত্বর অপসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চত্বরটি সরানো হয়ে থাকলেও আমার জানা নেই। তবে আলোচনা সাপেক্ষে চত্বরটি নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি আরও জানান, কবির নামে একটি জাদুঘর করার জন্য শিল্পকলা একাডেমিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই জাদুঘরের কাজ শুরু হবে।

১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে কায়কোবাদ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। ঢাকার পোগোজ এবং সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করতেন কায়কোবাদ। এরপর ঢাকা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। কিন্তু তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা না দিয়ে পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে নিজ গ্রাম আগলা পূর্বপাড়ায় ফিরে আসেন। এখানে তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেন। বাল্যকাল থেকেই কবিতায় তাঁর পারদর্শিতা চোখে পড়ে। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই খ্যাতিমান এই কবি মৃত্যুবরণ করেন।