জন্মস্থানের অসহায়দের ঋণ মেটানোর সময় তো এখনই

খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। ছবি: লেখক
খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। ছবি: লেখক

করোনাভাইরাসের প্রকোপে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। দেশেও বাড়ছে এর প্রাদুর্ভাব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা। এর প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় দিনমজুর, হতদরিদ্র ও নিম্নশ্রেণির মানুষ। তাঁদের কাছে করোনার চেয়েও বেশি ভয়ংকর ক্ষুধা। এ অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার হতদরিদ্র মানুষের ক্ষুধা মেটাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাঁদের ভাষ্য, জন্মস্থানের অসহায়দের ঋণ মেটানোর সময় তো এখনই!

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। কিন্তু বন্ধ হলেও বাড়ি এসে নিশ্চুপ বসে থাকেননি আশুগঞ্জ উপজেলার এই শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দ্বীন মোহাম্মদের আহ্বানে জন্মস্থানের হতদরিদ্র মানুষদের জন্য সহযোগিতা করার পরিকল্পনা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও দরিদ্রদের সহযোগিতার প্রত্যয় নিয়ে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, আশুগঞ্জে’র ব্যানারে একে একে যুক্ত হন আজিজুল হক, ফাতেমা হীরা, আরিফ (চবি), খাইরুল কবির অভি, তানজিনা নাজিফা (ঢাবি) উমর খান (চবি), আবদুল্লাহ মিজান, কাউছার, তুহিন (শাবিপ্রবি), সামিয়াসহ (কুবি) দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সরকারি কলেজের প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী।

গতকাল সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাতের আঁধারে, কোনো ধরনের ফটোসেশন ছাড়া উপজেলার পাঁচ শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারের বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসেবে পৌঁছে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

অসহায় মানুষদের ঘরে এসব প্যাকেট পৌঁছে দেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, আশুগঞ্জে’র স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: লেখক
অসহায় মানুষদের ঘরে এসব প্যাকেট পৌঁছে দেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, আশুগঞ্জে’র স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: লেখক

এর আগে, দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর সময়ে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও লোকারণ্য এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। করোনায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং এবং তাদের মাঝে সহস্রাধিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কও বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের সচেতনতা প্রচার অব্যাহত রয়েছে এবং খাদ্যসহায়তাও ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলে জানান তাঁরা।

উপজেলার আটটি ইউনিয়ন থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যায়ের হতদরিদ্র মানুষদের তালিকা প্রস্তুত করেন। খাদ্যসামগ্রী হিসেবে প্রতিটি পরিবারকে পরিমিত পরিমাণ চাল, আলু, ডাল, পেঁয়াজ ও সাবান দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের পরিচিত বড় ভাই, শিক্ষক, প্রবাসী, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতায় খাদ্যসামগ্রী কেনা হয় হতদরিদ্রদের জন্য।

সচেতনতার জন্য মাইকিং করছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, আশুগঞ্জে’র স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: লেখক
সচেতনতার জন্য মাইকিং করছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, আশুগঞ্জে’র স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: লেখক

এসব কার্যক্রমে জন্মস্থানের মানুষের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে মন্তব্য করনে সংগঠনের সমন্বয়ক শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনার অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজের এলাকার মানুষের সেবায় কিছু করতে পারছি, এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছুতেই নেই।’

দুর্যোগগ্রস্ত সময়ে স্থানীয় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্ববোধ করেন সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিজস্ব উদ্যোগে ফান্ড রাইজিং করে এসব সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থানীয় মানুষের যেকোনো বিপদে আমাদের এ ধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

উল্লেখ্য, ‘শিক্ষাই শক্তি, একতাই মুক্তি’ স্লোগান নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আশুগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, আশুগঞ্জ’। উপজেলার মানুষের যেকোনো দুঃসময়ে পাশে থাকার প্রত্যয় তাঁদের। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন ’৫২, ’৭১-এ দেশের ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি করোনাযুদ্ধের এই ক্রান্তিলগ্নেও সমাজের পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ালে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

*লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়