জবির মার্কেটিং বিভাগের ১৪ বছর: শিক্ষার্থীদের একটি পরিবারের গল্প
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার প্রায় এক বছর পর ২০০৭ সালের ৭ জুলাই যাত্রা শুরু করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের মার্কেটিং বিভাগ। সফলতার সঙ্গে ১৩ বছর পাঠদান করে ১৪তম বছরে পা রাখল বিভাগটি। নিজ বিভাগকে ঘিরে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ভালো লাগা, শত অনুভূতি ও ভালোবাসা।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। তাঁরা বলছেন, পরিবার ছেড়ে রাজধানীতে এসে নতুন একটি পরিবার পেয়েছেন তাঁরা।
লামিয়া আহমেদ, দ্বিতীয় বর্ষ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমার ভালোবাসার বিভাগে পড়তে পেরে খুবই গর্ববোধ করি। অন্য বিভাগগুলো থেকে আমার বিভাগটি খুবই ভিন্ন রকম তার সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার জন্য। ভালোবাসার বিভাগ শুধু সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশের জন্যই প্রিয় হয়ে ওঠেনি, প্রিয় বিভাগটি খুবই শৃঙ্খলাপূর্ণ। সুযোগ–সুবিধার দিক বলতে হলে আমার মার্কেটিং বিভাগ সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন: সুন্দর মনোরম ক্লাস রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার ল্যাবের ব্যবস্থা রয়েছে এবং রয়েছে ওয়াই–ফাইয়ের সুব্যবস্থা। তা ছাড়া লোডশেডিংয়ের সমস্যা সমাধানে রয়েছে জেনারেটরের সুব্যবস্থা। আরও রয়েছে রিডিং রুমের ব্যবস্থা, সেই সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশে অবসর সময়ে আমরা সেখানে লেখাপড়া করতে পারি এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় বইসমূহ সংগ্রহ করতে পারি।
আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কনফারেন্স রুমের সুব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে আমরা যেকোনো ধরনের প্রোগাম, ইভেন্ট খুব সুন্দরভাবে সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজন করতে পারি। ভালোবাসার এই মার্কেটিং বিভাগটি আরও বেশি প্রিয় হয়ে ওঠার কারণ হচ্ছে, আমাদের বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষক খুবই আন্তরিক। আন্তরিকতার সঙ্গে যেভাবে পাঠদান করেন, তা ছাড়া আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধানও করে থাকেন তাঁরা। শুধু শিক্ষকেরাই নন, বিভাগের সিনিয়র ভাইয়া-আপুরাও আমাদের বিভিন্ন ধরনের একাডেমিক সাহায্য করে থাকেন খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে। সহপাঠীরাও আমরা একে অন্যকে লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করি। বিভাগের স্টাফ ভাইয়ারাও খুবই আন্তরিক। আমার এই প্রিয় মার্কেটিং বিভাগকে শুধু একটি বিভাগ বললে কম হবে, এই বিভাগকে আমি বলতে চাই ভালোবাসার ‘মার্কেটিং পরিবার’।
উম্মে আয়মান, প্রথম বর্ষ
এই তো সেদিন মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বহুদিনের লালিত রঙিন স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করার সুযোগটা আমার জন্য পরম পাওয়া ছিল। ইন্টারমিডিয়েট থেকেই পড়ার ইচ্ছে পূরণও হলো। প্রথম দিন ক্লাসে উপস্থিত হয়ে সব অপরিচিত মুখের মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিলাম, এরপর পর্যায়ক্রমে বড় ভাইয়া-আপুরা আসেন, পরিচিত হন খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে, এরপর শিক্ষকদের বক্তব্য যেন আমাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার সাহসটা সত্যিই দ্বিগুণ করে দিয়েছে। সেদিন থেকেই তাঁদের একটি কথা মস্তিষ্কে গেঁথে গিয়েছিল, মার্কেটিং শুধু একটি ডিপার্টমেন্ট নয়, এটি একটি পরিবার, খুব বেশি সময় এই ডিপার্টমেন্টে আমরা না কাটালেও এর মধ্যকার শিক্ষক, ছাত্র, স্টাফসহ সবার মধ্যকার আন্তরিকতা ও বন্ধন সত্যিই মুগ্ধ করেছে আমাদের। চলমান মহামারিতেও মার্কেটিং একটি পরিবারের মতনই চেষ্টা করেছে প্রত্যেক সদস্যের পাশে দাঁড়াতে এবং চেষ্টা সফলও হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সুখে–দুঃখে পাশে থেকে আবারও প্রমাণ হয়েছে যে, হ্যাঁ, আমরা সত্যিই একটি পরিবার। ১৪তম বছরে পা রাখল আমাদের ডিপার্টমেন্ট। এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয় অনলাইন সেমিনারে। দূর–দূরান্তে থেকেও মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের সবাই সেমিনারে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছেন, যার কারণে খুব সুন্দরভাবেই দিনটি উদযাপিত হয়েছে। অবশেষে শুভকামনা মার্কেটিং পরিবারের জন্য এবং এর প্রত্যেক সদস্যের জন্য।
ফারহা মনামী, তৃতীয় বর্ষ
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ভর্তি হওয়া, ’১৮–এর ১ জানুয়ারি প্রথম ডিপার্টমেন্টে আসা। এরপর দেখতে দেখতে দুটি বছর পার। ভার্সিটির যেকোনো অনুষ্ঠানে হোক তা পয়লা বৈশাখ অথবা ফাল্গুন—ডিপার্টমেন্টের নবীনবরণ অথবা বিদায়ী সংবর্ধনা, ডিপার্টমেন্টের রুমগুলোয় ক্লাসের অবসরে আড্ডা, পরীক্ষার সময় ল্যাব বা সেমিনারে পড়ার জন্য ভিড় করা এমন অনেক স্মৃতি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে।
এই মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট আজ আমার পরিচয়। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমি জবির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। আমরা ডিপার্টমেন্টের ১২তম আবর্তন হিসেবে প্রবেশ করে। এরপর দুই বছরে নতুন আরও দুটি ব্যাচ এসেছে। মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট তার ১৩তম বছর পূর্তি শেষে ১৪তম বছরে পদার্পণ করেছে। সত্যি এটি মার্কেটিংয়ের স্টুডেন্টের জন্য খুব আনন্দের দিন।
প্রকৃতি আশেক, দ্বিতীয় বর্ষ
ভালোবাসার প্রিয় বিভাগ মার্কেটিং বিভাগ। এক বছরের মতো সময় পার করেছি প্রিয় এই বিভাগে, তাতেই অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি প্রিয় এই মার্কেটিং বিভাগকে।
ডিপার্টমেন্টে আসার আগেও ভাবিনি আমি একটি পরিবার পাব। কখনো কোনো সমস্যা বা কোনো বিপদে পড়লে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও সিনিয়ররা সব সময় এগিয়ে আসেন। খুব সৌভাগ্যবান না হলে হয়তো এমন পরিবার কেউ পায় না। ধন্যবাদ প্রিয় শিক্ষকেরা ও সিনিয়রদের সব সময় এভাবে আমাদের পাশে থাকার জন্যে। সব শেষে বলতে চাই, এই ডিপার্টমেন্ট আমাকে দিয়েছে একরাশ সীমাহীন ভালোবাসা নামক একঝাঁক বন্ধু, যাদের নিয়েই পাড়ি দিতে চাই ওই দূর–বহুদূর। আমাদের আড্ডাগুলো, বিকেলবেলা থেকে গোধূলি পর্যন্ত আকাশ দেখার মুহূর্তগুলো আর রাতের আধাঁরের গাঢ়তায় টিকে থাকুক আমাদের এই বন্ধুত্ব।