জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস হাজারো মানুষের

লোহার কাঠামোর ওপর বসানো টিন মরচে ধরে নষ্ট হয়েছে অনেক আগে। তার ওপর দেওয়া হয়েছে শণ। এরপরও কুয়াশা ও বৃষ্টির পানি ঘরে ঢোকায় চালার ওপর দেওয়া হয়েছে পলিথিন। এভাবে বৃষ্টি-কুয়াশার পানি ঠেকিয়ে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বলিরপাড়ার অরোনিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছেন দুই শ পরিবারের হাজারো মানুষ।

বৃদ্ধ নুরুল হুদার (৬৫) জায়গাজমি নেই। ভূমিহীন এ ব্যক্তির ১৫ বছর আগে ঠাঁই হয় এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ২০০৫ সাল থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি কক্ষে বসবাস করছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর পরিবারে ছয় সদস্য। গাদাগাদি করে তিনি একটি কক্ষে দিন কাটাচ্ছেন পরিবার নিয়ে। নুরুল হুদা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার মানুষ।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে দুই শ ভূমিহীন পরিবারের জন্য অরোনিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালের ১০ জুলাই এ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রকল্পে দুটি সারি রয়েছে বসতঘর। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে তিনটি স্কুলঘর, পূর্ব পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। এতে রয়েছে ১০টি নলকূপ ও ৮০টি শৌচাগার।

১৫ জানুয়ারি দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঝখানে বড় একটি পুকুর। পুকুরের পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ের ৫০টি বসতঘরে নতুন টিন দেওয়া হয়েছে। অন্য ১৫০টি ঘরের বেশির ভাগের ছাউনি, বেড়া, দরজা ও জানালা নষ্ট হয়ে গেছে। কারও দরজা, কারও জানালা ভেঙে পড়েছে। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেকের শৌচাগার। স্কুলঘরগুলোর টিনও নষ্ট হয়ে ঝরে গেছে অনেক আগেই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের পারভীন আকতার (৩৪) বলেন, ঘরগুলোর অবস্থা এতই নাজুক যে বৃষ্টি হলে প্রতি ঘরের ভেতর থালা–বাসন, পাতিল বসিয়ে দিতে হয়। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে চালার ওপর খড়কুটো ও পলিথিন দিতে হয়েছে।

শাহেনা বেগম (৪৫) বলেন, দুই শ পরিবারের হাজারো মানুষ খুব কষ্টে পুকুর ব্যবহার করে। কোনো পাকা সিঁড়ি নেই। 

অরোনিমা আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচটি ব্যারাকে নিম্নমানের টিন দিয়ে সংস্কারকাজ করা হয়েছে। একটি ঘরেরও দরজা-জানালা ঠিক করা হয়নি। পুরোনো টিনগুলো অনেক মজবুত ছিল। দায়সারা কাজ করে টাকা লুটপাট করা হয়েছে। 

মো. ইলিয়াছ আরও বলেন, সংস্কারের অভাবে অনেক ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। এ কারণে আশ্রয়ণের অনেক বাসিন্দা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলঘরগুলো জীর্ণ হয়ে পড়ায় এখন শিশুদের পাঠদানও বন্ধ করে দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা মো. ইসমাঈল প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক নেই। এতে পড়ালেখা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ভিজিএফ ও ভিজিডিসহ কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায় না আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সৌভ্রাত দাশ বলেন, ‘সদ্য বাস্তবায়িত সংস্কারকাজটি আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাত প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাঁচটি ব্যারাকে সংস্কারকাজ হয়েছে। অন্য ব্যারাকগুলো সংস্কারেও দ্রুতসময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, অরোনিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। নির্মাণের পর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। সম্প্রতি বাস্তবায়িত ১৮ লাখ টাকার সংস্কারকাজ নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।