জলাবদ্ধতা, যানজটে নাকাল নগরবাসী

>
গতকালের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রোকেয়া সরণির বিভিন্ন অংশ। চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। বিকেলে শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে ছবিটি তুলেছেন জাহিদুল করিম
গতকালের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রোকেয়া সরণির বিভিন্ন অংশ। চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। বিকেলে শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে ছবিটি তুলেছেন জাহিদুল করিম
উন্নয়নকাজের জন্য রাজধানীজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এর মধ্যে গতকাল দুপুরে ঘণ্টাখানেকের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। এতে ভোগান্তি আরও বাড়ে নগরবাসীর

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের চাপ ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয় দুপুরের ঘণ্টাখানেকের টানা বৃষ্টি। এতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও যানজটে নাকাল হয়েছে রাজধানীবাসী।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১২৩ মিলিমিটার। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় চলতি মৌসুমে স্বল্প সময়ে এত বৃষ্টি হয়নি।

এই ‘ভারী’ বৃষ্টিপাতে বরাবরের মতো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার রোড (কারা অধিদপ্তরের সামনের অংশ), উমেশ দত্ত রোডসহ বিভিন্ন সড়ক।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও ডুবে থাকতে দেখা যায় পানিনিষ্কাশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ঢাকা ওয়াসার সামনের সড়ক, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ ও কারওয়ান বাজার, এফডিসি ও পেট্রোবাংলার সামনের সড়ক ও সোনারগাঁও হোটেল মোড় এলাকা। এ সময় ওয়াসা মোড় থেকে লা ভিঞ্চি হোটেল পর্যন্ত এক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ভ্যানচালকদের ১০ টাকার বিনিময়ে অনেক অফিসফেরত মানুষকে পার করতে দেখা যায়।
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয় রাজধানীর বেহাল সড়ক। কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউসহ মিরপুর রোড ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর ১২ নম্বর মোড় পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় নগরবাসীকে।

বৃষ্টিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছবি শেওড়াপাড়া থেকে তোলা l প্রথম আলো
বৃষ্টিতে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছবি শেওড়াপাড়া থেকে তোলা l প্রথম আলো

বিকেল পাঁচটায় কারওয়ান বাজার মোড়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত মানুষ। ব্যাংক কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলের বৃষ্টিতে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠতে পেরেছি। মিরপুর যেতে সময় লেগেছে আরও দুই ঘণ্টার কাছাকাছি। এভাবে চলে না।’
বিকেলে আসাদগেটে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাবিলা আক্তার। তিনি বলেন, ‘টাউন হল থেকে রিকশায় আসাদগেট মোড় পর্যন্ত আসতেই ২০ মিনিট সময় লেগেছে। সাভারের বাসের জন্য প্রায় ১৫ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এর মধ্যে দুটি বাস এসেছিল। কিন্তু ভিড়ের কারণে উঠতে পারিনি।’
দেখা যায়, মিরপুর রোডে যানজটের কারণে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর রোডে ঢোকার সিগন্যাল অনেকক্ষণ পরপর ছাড়ছেন। মেশকাত পরিবহনে যাত্রাবাড়ী থেকে আসাদগেটে যাচ্ছিলেন আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, শাহবাগ থেকে আসাদগেটে আসতেই সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা।
ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাস থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কারওয়ান বাজারে নামেন রফিকুল হক নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, পুরো সড়কেই যানজট। সাভার থেকে গাবতলী পর্যন্ত আসতে তিনি তেমন যানজটে পড়েননি। মিরপুর রোডে ঢোকার পরই যানজট শুরু হয়েছে। খামারবাড়ির সামনের সিগন্যালেই প্রায় আধঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে।
বৃষ্টির পর নিউ ইস্কাটন রোডের দক্ষিণ পাশের সড়কে কোমরপানি জমে। ফুটপাতেও ছিল হাঁটুপানি। এতে অনেক দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়কে কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরপানি ছিল।

সড়কের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পথচারীরা। গত মঙ্গলবার ছবিটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সড়কের নাবিস্কো মোড়সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা l সাজিদ হোসেন
সড়কের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পথচারীরা। গত মঙ্গলবার ছবিটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সড়কের নাবিস্কো মোড়সংলগ্ন এলাকা থেকে তোলা l সাজিদ হোসেন

বৃষ্টির পর মিরপুরের পীরেরবাগ সড়কে দেখা গেল, সবজি বিক্রেতা মো. হাবিবুল্লাহ হাঁটুপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে সবজিসহ ভ্যানটি স্রোত থেকে বাঁচাতে আঁকড়ে ধরে আছেন। পাশেই ইউসুফ ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী দোকানে ওঠা পানি থেকে মালামাল রক্ষার জন্য ব্যস্ত।
গত বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, জুলাই মাসে সারা দেশে ৬৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ২৩ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হলেও জুলাই মাসে গড়ে ২৯ দিন বৃষ্টি হয়েছে। এ মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে অবশ্যম্ভাবী জলজট ও যানজটে নগরবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।