জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ, রাজাকারদের বিচার দাবি

মহান বিজয় দিবসে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল ওরা। সাভার, ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর। ছবি: সাইফুল ইসলাম
মহান বিজয় দিবসে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল ওরা। সাভার, ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর। ছবি: সাইফুল ইসলাম

চিহ্নিত কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। তবে দেশজুড়ে থাকা রাজাকারদের বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের উৎসবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করার পাশাপাশি সমাজের সব ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের বর্জন করার দাবিও শোনা গেছে।

সোমবার বিজয়ের ৪৮ তম বার্ষিকীতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদি শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে। গায়ে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের পোশাক, মুখে বিজয়ের দৃপ্ত স্লোগান এবং হাতে ফুল-প্ল্যাকার্ড নিয়ে ভোর থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল নামে।

রাজধানী ঢাকায় বরাবরের মতো ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারপর থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের উৎসব। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল।

এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে আবারও শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া প্রমুখ।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কারণে স্বাধীনতাকে এখনো সুসংহত করা যায়নি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ ছাড়া শহীদদের শ্রদ্ধা জানান গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রমুখ। এ ছাড়া বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, যুক্ত ফ্রন্ট, ন্যাপ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সাম্যবাদী দল, জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-যুব সংগঠন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

পরে স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্য। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব বয়সী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেদিতে ফুল দিয়েছেন। শহীদদের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ জানিয়েছেন। রাজনীতিক, কূটনীতিক, সমাজকর্মী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরে, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের বেদি।

দিন শেষে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল স্মৃতিসৌধের বেদি। সেখানে শ্রদ্ধা জানান ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং মন্ত্রী-সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা। এ ছাড়া সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সিআরপি, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি)