জাতিসংঘকে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ বাংলাদেশের

রোহিঙ্গাদের আগমন উপলক্ষে সেজেছিল ভাসানচর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

মাসখানেক আগে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সময় এর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল জাতিসংঘ। গত এক মাসে এ নিয়ে কোনো কথা না বললেও রোহিঙ্গা স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ এখনো যুক্ত হয়নি। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভাসানচরে স্থানান্তরের সঙ্গে যুক্ত হতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় জাতিসংঘকে এ অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি স্টিভ করলিস উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, টাস্কফোর্সের সভায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় পরিচালিত তহবিল যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনার (জেআরপি) বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০২১ সালের তহবিলের জন্য ৯৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আলোচনার একপর্যায়ে জাতিসংঘকে ভাসানচরের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানালে মানবিক সহায়তায় যুক্ত কারিগরি সুরক্ষা দলের সফর আর তাদের কর্মপরিধির প্রসঙ্গটি আসে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের কারিগরি দলের কাজের পরিধিতে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, তার অনেকগুলো বাস্তবসম্মত নয়। এতে সমন্বয় করাটা জরুরি। বাংলাদেশ এ সময় অনুরোধ করেছে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘের ভাসানচরে যুক্ত হওয়াটা দরকার। কাজেই দুই পক্ষের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে কাজটা সম্ভব। তাই জাতিসংঘ প্রস্তাবিত কর্মপরিধিতে যেন পরিবর্তন আনে।

টাস্কফোর্সের বৈঠকে কক্সবাজারে অবস্থান নেওয়া অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর আগে ২০১৬ সালে এসেছিল প্রায় ৮৭ হাজার। তারও আগে থেকে বেশ কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছিল। ২০১৭ সালের পরেও যারা এসেছে, তারাসহ রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশকে নিবন্ধন করা হলেও এর বাইরে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়ে গেছে। সরকার এসব অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে চায়।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা নিবন্ধিত হলে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা দুই পক্ষের জন্যই ভালো। একটি দেশে যে জনসংখ্যা আছে, তার হিসাব সরকারের কাছে থাকতে হবে। অন্যদিকে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা নিবন্ধনের আওতায় এলে তাদেরও উপকার হবে।

আরেকজন কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাসংক্রান্ত যেকোনো ধরনের প্রকল্পে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে বৈঠকে জোর দেওয়া হয়। বর্তমানে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, যার প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কিছু প্রকল্প আছে, যেগুলো রোহিঙ্গাদের জীবিকা বা উদ্যোক্তা সম্পর্কিত, যার প্রভাব নেতিবাচক। কারণ, এতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের সমাজে অন্তর্ভুক্তি করা হবে, এমন একটি ভুল বার্তাও কেউ কেউ নিচ্ছেন।