জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে একটি স্যুভেনির এবং ইউএন পিসকিপার্স জার্নালের একটি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা, ২৯ মে
ছবি: পিআইডি

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বাংলাদেশ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি আজ শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। এটা জাতিসংঘকে আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের এই দিনে বিশ্বের সব শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা ২১ শতকের বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। ভবিষ্যতেও যারা আসবে, তাদের আমরা সেভাবেই তৈরি করতে চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন শান্তিরক্ষী বাংলাদেশের। এই সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ৮টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন।

এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবির কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের দক্ষতার কারণেই তাঁরা এই পদ পেয়েছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একটি বার্তাও পড়ে শোনান।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক এবং লেবাননে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। তিনি দেশের কেবল প্রধানমন্ত্রী নয়, জাতির জনকের কন্যা হিসেবে তাঁদের সব সময় সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে একটি স্যুভেনির এবং ইউএন পিসকিপার্স জার্নালের একটি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিস’ শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়।

গত এক বছরে বিশ্ব শান্তি স্থাপনে শহীদ এবং আহত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন পুরস্কার বিতরণ করে অনুষ্ঠানে তাঁদের সম্মানিত করেন।

কোভিড-১৯ মানুষকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমাদের যাঁরা শান্তিরক্ষী রয়েছেন সবাইকে আমি বলব, এই সময় খুব শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, সব দেশেই একটা অসহিষ্ণুতা, অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আর আমরা যে শান্তির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি, সে কথা সব সময় মনে রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন।’

শান্তিরক্ষা মিশনে ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী শহীদ এবং ২৪০ জন আহত হয়েছেন। শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী ৮ বাংলাদেশিকে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ দ্যাগ হ্যামারশোল্ড পদকে ভূষিত করে, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ।