বাংলাদেশি সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আট মানবাধিকার সংগঠন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেটকে দেওয়া এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসসহ আট সংগঠন ওই আহ্বান জানায়। চিঠিতে বলা হয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরকারের দমন-পীড়ন ক্রমেই বাড়ছে, যা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই চিঠিতে মিশেল ব্যাশেলেট ও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর ধারাবাহিক দমন–পীড়নের বিষয়ে প্রকাশ্যে দৃঢ়ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করার আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার সুরক্ষা নিশ্চিতে সম্ভাব্য সব উপায়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

এ ব্যাপারে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিটিগেশন–বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলিটা বায়েনস বলেন, বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা শুধু তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং জীবনের ঝুঁকির মুখে আছেন। জাতিসংঘ এবং এ বিষয়ে সোচ্চার সরকারগুলোর উচিত বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানো। বাংলাদেশ সরকারকে তাঁদের স্পষ্ট করা উচিত যে গণতন্ত্রের জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জরুরি।

এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে অন্তত ২৪৭ জন সাংবাদিক হামলা, হয়রানি ও ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন। ওই আট সংগঠন চিঠিতে উল্লেখ করেছে, কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোরকে নির্যাতনের খবর প্রকাশের পর গত ১ মার্চ মিশেল ব্যাশেলেট যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তা বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে সাংবাদিকেরা যে বিপদের মুখে রয়েছেন, সে বিষয়টি তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচক সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায়ই চাপে থাকে। দেশের বাইরে বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বী বাংলাদেশিদের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমকে ব্যাপকভাবে দমন ও সরকারের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সম্পাদকদের হয়রানির প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকেরা নজিরবিহীনভাবে স্ব–আরোপিত নিয়ন্ত্রণের (সেলফ সেন্সরশিপ) পথ বেছে নিয়েছেন।

সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট ও সরকার সমালোচকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং এ আইনে গ্রেপ্তার সব বন্দীকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে জাতিসংঘ ও দাতাদের সব ধরনের সুযোগের ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে।